কলামন্দিরে একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল। নিজস্ব চিত্র
নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে শুরু করে একের পর এক বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আক্রমণ শানাচ্ছিলেন বিরোধীদের। এ বার মোদী-শাহের সুরই শোনা গেল রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর গলায়। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় বায়ু সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র জেরে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের উদ্দেশেই পাল্টা প্রশ্ন তুললেন রাজ্যপাল।
কলামন্দিরে রবিবার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপাল ত্রিপাঠী বলেছেন, ‘‘দেশের বাইরে এবং ভিতরে, দু’জায়গাতেই এমন কিছু লোক আছে, যারা এখন প্রশ্ন তুলছে। আমাদের সেনা কী করেছে, কী করেনি, বোমা ফেলেছে কি না, ফেললে কোথায় ফেলেছে, কত জন মারা গিয়েছে?’’ সেনাদের নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের বলতে চাই— এই কথা বলে একটি শায়রির অংশ উদ্ধৃত করেছেন রাজ্যপাল। অনেকের মতে যার মর্মার্থ, যাঁরা এমন প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা আসলে ‘বিষধর’!
ক’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কিছু খবর উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেনা অভিযান সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ দাবি করেছিলেন।রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই ধারণা, নাম না করে রাজ্যপাল এ দিন আসলে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রীকেই।রাজ্যপালের পদে থেকে যা ‘সমীচীন’ নয় বলেই অনেকের মত। অনুষ্ঠানের পরে রাজ্যপাল অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি।
কয়েক দিন আগেই মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় কাশ্মীরের সব পণ্য বয়কটের ডাকের পক্ষে মত দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। রাজ্যপাল ত্রিপাঠীর মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। সাংবিধানিক পদে থেকে রাজনৈতিক দলের সুরে কেন একের পর এক রাজ্যপাল কথা বলছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গেই তারা মনে করিয়ে দিয়েছে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা থেকে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ কেউই সেনার ‘কৃতিত্ব’ বা ‘বীরত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি।
রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘উনি হেলে সাপ না কেউটেসাপ, কী খুঁজছেন জানি না! একটা নাটকের গান আছে—মহারাজ বৃদ্ধ হয়েছেন, সব তাই শুনতে পান না। উনিও (রাজ্যপাল) মাঝেমধ্যে জেগে ওঠেন!’’ পার্থবাবুর আরও সংযোজন, ‘‘রাজ্যপাল রাজ্যপালের মতো বলেছেন। কী আর করা যাবে!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজ্যপালের পদ সাংবিধানিক। কিন্তু মেঘালয় বা বাংলার রাজ্যপাল কেন্দ্রের শাসক দলের রাজনৈতিক সুরে কথা বলছেন। সাংবিধানিক পদের সম্মান, মর্যাদা রাখতে না পারলে তা দুর্ভাগ্যজনক বলেই কংগ্রেস মনে করে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘সাংবিধানিক পদের মর্যাদা রক্ষা করতে হয়। তা ছাড়া, প্রশ্ন উঠলে এত বিচলিত হওয়ার তো কারণ নেই! জুতসই জবাব থাকলে প্রশ্নের মোকাবিলা করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy