শুক্রবারই পরোক্ষ নিষ্কৃতি মৃত্যুর বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। কী উপায়ে সেই নিষ্কৃতি মিলবে তার আইনি পথও বাতলেছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। রোগ চিকিৎসার অতীত হলে সম্মানজনক মৃত্যুর পথ প্রশস্ত করে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু ভিন্ন সুরও রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের কেউ কেউ যেমন মনে করছেন, এই রায়ে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হবে।
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখন কোমায় চলে যাওয়া রোগীর পরিজনেরা অনেক সময়েই চিকিৎসার খরচ টানতে না পেরে জীবনদায়ী ব্যবস্থা খুলে নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে চিকিৎসকদের অনুরোধ করতেন। পরিস্থিতি বিচার করে অনেক সময় সেই অনুরোধ রক্ষাও করা হতো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনি পথ বেঁধে দেওয়ার পরে ব্যক্তিগত অনুরোধের জায়গাটা আর থাকবে না বলেই তাঁরা মনে করছেন। এখন পরোক্ষ নিষ্কৃতি মৃত্যু চাইতে গেলে বিস্তর আইনি পথ পেরোতে হবে। ফলে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা যেমন থাকছে, তেমনই দীর্ঘায়িত হবে গোটা প্রক্রিয়া।
দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক সুমিত রায়ের কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় ইতিবাচক। কিন্তু অনেক সময় আইসিইউ-তে একাধিক রোগে আক্রান্ত লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে থাকা রোগীর, সুস্থ হওয়ার কোনও আশাই থাকে না। সেই পরিস্থিতিতে যদি পরিজনেরা সরকারি মেডিক্যাল বোর্ড, প্রয়োজনে আদালতে ছোটাছুটি করার মতো মানসিক অবস্থায় না থাকেন তা হলে গোটা প্রক্রিয়াটা আরও দীর্ঘায়িত হবে। হাসপাতালের বিলও বাড়বে।’’
চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ব্যক্তিগত বোঝাপ়ড়ায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তা আর থাকছে না। আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়ার কথায়, ‘‘এখন যদি এই ধরনের কোনও রোগীর পরিবার এসে বলেন যে, তাঁরা আর চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছেন না, তা হলে কী করা হবে সেটা ধোঁয়াশা।’’
রায়কে স্বাগত জানিয়ে এই সমস্যার একটা সমাধানসূত্র বাতলাচ্ছেন দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সত্যজিৎ বসু। তিনি বলেন, ‘‘নিষ্কৃতি মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট আইনি ব্যবস্থা তৈরি হওয়া অবশ্যই ভাল। তা না হলে এটি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’’ তাঁর মতে, যদি কোনও রোগীর পরিবার চিকিৎসার খরচ চালাতে না পারেন, তা হলে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে।
অ্যাপোলো হাসপাতালের সিইও রানা দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রতিটি স্তরে কমিটি থাকবে, নজরদারিও বা়ড়বে। তাই নিষ্কৃতির অধিকারের অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।’’
কলম্বিয়া এশিয়ার কর্তা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এখন ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার জন্য সরকারি বিভিন্ন ধাপ পেরোতে হয়। নিষ্কৃতি মৃত্যুর ক্ষেত্রেও তা-ই করতে হবে। ফলে নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন না। যদিও সুমিতবাবুর পাল্টা যুক্তি, ‘‘ব্রেন ডেথের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একটি কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়। আদালতের কোনও ভূমিকা নেই। নিষ্কৃতি মৃত্যুর ক্ষেত্রে দু’টি আলাদা কমিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ম্যাজিস্ট্রেট চূড়ান্ত রায় দেবেন। ফলে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।’
বিএলকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক ধর্মা চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, এ দেশে চিকিৎসকদের কাছে রোগী নয়, রোগীর পরিবার, পাড়ার লোকেরা সমস্যার। দশ দিন পরেও কেউ এসে বলতে পারেন, লিভিং উইল রয়েছে। তা হলে এত দিন কেন কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে রেখে বিল বাড়ানো হল? অন্য দিকে আর জি কর হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘এ দেশে দুর্নীতি প্রতিটি স্তরে। মৃত্যুর অধিকার প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় সেই দুর্নীতি থাবা বসাবে না তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy