Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বোনের অপমানই বদলে দিয়েছে হার্দিকের জীবন

অজ্ঞাতকুলশীল এক পটেলের লড়াই অথবা নিছক অপমানের বদলা নেওয়ার গল্প! যে ভাবেই দেখা যাক না কেন, একটা কথা ঠিক। সুরাত থেকে রাজকোট, গাঁধীনগর থেকে অমদাবাদ— হার্দিক পটেল রাজনীতির অভিজাততন্ত্রের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন আর এটাই এখন ভোটের মুখে দাঁড়ানো গুজরাতের অন্যতম রিং টোন!

হার্দিক পটেল। ছবি: সংগৃহীত।

হার্দিক পটেল। ছবি: সংগৃহীত।

অগ্নি রায়
গাঁধীনগর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

অজ্ঞাতকুলশীল এক পটেলের লড়াই অথবা নিছক অপমানের বদলা নেওয়ার গল্প! যে ভাবেই দেখা যাক না কেন, একটা কথা ঠিক। সুরাত থেকে রাজকোট, গাঁধীনগর থেকে অমদাবাদ— হার্দিক পটেল রাজনীতির অভিজাততন্ত্রের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন আর এটাই এখন ভোটের মুখে দাঁড়ানো গুজরাতের অন্যতম রিং টোন!

অথচ কিছু দিন আগেও হার্দিকের জীবন বইছিল বিরামগাঁওয়ে জলের ছোট পাম্পের পারিবারিক ব্যবসা করে। আড়াই বছর আগে কে-ই বা চিনত তাঁকে? অমদাবাদের সহজানন্দ কলেজ থেকে সাদামাটা নম্বর পেয়ে পাশ করেছিলেন যখন, বড় কোনও মঞ্চ গড়ার স্বপ্নও ছিল না। কিন্তু একটি ছোট্ট ঘটনা তাঁর জীবনকে বদলে দিল। ভিতরের বারুদটা ফেটে বেরোল।

২০১৫ সাল। ওই বছর হার্দিকের বোন মনিকা পটেল ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন কলেজে। সেই সঙ্গে আবেদন করেন একটি সরকারি বৃত্তির জন্য। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৃত্তি নাকচ হয়। বোনকে ভেঙে পড়তে দেখে খোঁজ শুরু করেন দাদা। দেখেন, তাঁর বোনের বহু বন্ধু অনেক কম নম্বর পেয়েও বৃত্তি পেয়েছে। হার্দিক জানান, “বিষয়টা নতুন নয়। কিন্তু আমার জীবন পাল্টে দিয়েছিল বোনের ওই অপমান।” তাঁর কথায়, “একজন পাতিদার ছাত্র ৯০% নম্বর পেয়েও এমবিবিএস-এ ভর্তি হতে পারে না। অথচ তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ছেলেমেয়েরা সংরক্ষণের মাধ্যমে ৪৫ শতাংশেই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।” ঘনিষ্ঠরা বলেন, এই ঘটনা়টাই হার্দিকের রাজনৈতিক জীবনের সূচনাবিন্দু। তবে ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতিটা শুরু হয়ে গিয়েছিল আরও সাত বছর আগে। ১৭ বছরের হার্দিক তখন যোগ দিয়েছিলেন পাতিদার সম্প্রদায়ের যুব সংস্থা সর্দার পটেল গ্রুপে। বক্তৃতার গুণে চটপট বিরামগাঁও শাখার সভাপতি হয়ে যান।

আরও পড়ুন:কর কমলেও সুর চড়া কংগ্রেসের

ওই প্রস্তুতির সময়টা হার্দিক একা নন, কারওয়া বর্গীয় পটেলরা সামগ্রিক ভাবেই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। গত চল্লিশ বছর ধরে গুজরাতে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন এবং একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত উত্তমভাই পারমার। তিনি বলেন, “ওই সময়ই কারওয়া বর্গের পটেলদের ক্ষোভ তৈরি হওয়া শুরু। তাঁদের তখন এতটাই হতদরিদ্র অবস্থা যে নিজেদের তৈরি শিক্ষাকেন্দ্রেও পয়সার অভাবে ঢুকতে পারছেন না। মোদী তত দিনে ভাইব্রান্ট গুজরাতে পৌঁছেছেন ঠিকই। কিন্তু ছোট চাষি, মজদুর, ছোট উদ্যোগের বারোটা বেজে গিয়েছে।” হার্দিক দেখছিলেন, আর্থিক মন্দা পাতিদার যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। অনলাইন বাণিজ্যের দাপটে মার খাচ্ছে সনাতন ব্যবসা। তাঁর অভিযোগ ছিল, সংরক্ষণের অভাবে চাকরি নেই। কিন্তু তাঁদের সর্দার পটেল গ্রুপ ক্ষমতাসীন দলের ধামাধারী।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই বোন মনিকার বৃত্তি না পাওয়া আর হার্দিকের বুকে আগুন জ্বলে ওঠা। তৈরি হল পাতিদার অনামত আন্দোলন সমিতি। হার্দিকের সভায় আজ গড়ে আড়াই লক্ষ লোক হয়। যেনতেন প্রকারেণ বিজেপি চেষ্টা করছে তাঁকে আটকাতে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে বৈঠক করছেন সমঝোতার জন্য। গুজরাতে পরিবর্তন হবে কি না, সেটা অন্য কথা। কিন্তু শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন হার্দিক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE