কংগ্রেসের কাছে যেটা ‘ক্ষত’, সেটাই গলার হার হয়ে উঠল বিজেপির! ‘মণিহার’!
মণিশঙ্কর আইয়ারকে ইতিমধ্যেই ‘মানসিক ভাবে অসুস্থ’ বলে আক্রমণ করেছেন আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব। ভোট ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে গুজরাতে পরাজয়ের কারণ হিসেবে কংগ্রেস নেতৃত্বও মণিশঙ্করের ‘নীচ আদমি’ মন্তব্যকে বেশ খানিকটা দায়ী করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতেও, ভোট প্রচারের মাহেন্দ্রক্ষণে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য মোদী-অমিত শাহর হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দেয়। ফলাফল দেখে অনেকেই মনে করছেন, গোটা বিষয়টিকে গুজরাতি অস্মিতা তথা মোদী-অস্মিতার উপর বহিরাগতের আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে জনতার আবেগের মোড় খানিকটা হলেও ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘‘একই ভাবে ২০০৭ সালে সনিয়াজি ‘মওত কি সওদাগর’ বলায় সুবিধা পেয়ে মোদী। মেরুকরণ ঘটিয়েছিলেন ভোটে।’’ এ বারেও মণিশঙ্কর ‘নীচ আদমি’ বলে ফেলার পরে চটজলদি তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় ঠিকই, কিন্তু তত ক্ষণে গুলি বন্দুক থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। মণিশঙ্কর এমন একটা সময়ে কথাটা বলেছিলেন, যখন আদিবাসী বলয়-সহ উত্তর এবং মধ্য গুজরাতের ৯৩টি আসনে ভোটের প্রচার বাকি। এ দিনের ফলে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় দফার ভোটেই বিজেপির সাফল্য বেশি।
প্রথম দফার প্রচারে পাকিস্তান-বিরোধিতা, রাহুলের ধর্মীয় পরিচয়, বাবর-মহম্মদ বিন তুঘলক, রামমন্দিরের মতো প্রসঙ্গ তুলে বিভিন্ন জনসভায় মেরুকরণের মরিয়া প্রয়াস করে যাচ্ছিলেন মোদী। কিন্তু খুব যে সাড়া মিলছিল, এমন নয়। এমতাবস্থায় অপ্রত্যাশিত ভাবে এই ‘নীচ’ খোঁচা হাতে পেয়ে কালবিলম্ব করেননি। দিনভর সভায় সভায় বলে গিয়েছেন, ‘‘ওঁরা আমাকে নীচ আদমি বলতে পারেন। আমি কিন্তু উঁচে (মহান) কাজই করে যাব।’’ এই দু’লাইনেই শেষ নয়। বলেছেন, ‘‘আমি সমাজের দুর্বল অংশের মানুষ। গরিব, দলিত, উপজাতি আর ওবিসিদের মতো দুর্বল অংশের মানুষের জন্য আমি জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত দেব।’’
এর আগেও যখনই তাঁর উপরে আক্রমণ এসেছে, তখনই তাকে গুজরাতি অস্মিতার উপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরেছেন মোদী। একই ভাবে গুজরাতের সাফল্য, তার বণিক মানসিকতার উপরে নিজের সিলমোহর দেগে দিয়েছেন। গত দু’দশক জুড়েই কংগ্রেসের তরফে যখনই মোদীকে বেফাঁস আক্রমণ করা হয়েছে, মোদী তার পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন। ‘ভাইরাস’, ‘রাক্ষস’, ‘রাবণ’— বিগত নির্বাচনগুলিতে কংগ্রেসের বাছা বাছা বিশেষণগুলির প্রত্যেকটিই ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। এ বার তাই খুব মেপে পা ফেলছিল রাহুলের দল। মণিশঙ্কর একাই তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন।
গত দেড় দশকে কংগ্রেসে মণিশঙ্কর আইয়ারের তেমন কোনও স্মরণযোগ্য অবদান রয়েছে বলে মনে করেন না কংগ্রেসের বড় অংশই। কিন্তু ২০১৭-র গুজরাত ভোটে তাঁর নামটি কংগ্রেসের বিষফোড়া হিসেবে রয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy