ভোট আসে ভোট যায়। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যায় গোটা দেশ! কিন্তু দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যে বিশেষ বদলায় না, আরও একবার তার প্রমাণ মিলল। এবং সরকারি ভাবেই! অর্থনৈতিক ও সামাজিক মাপকাঠিতে এ দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের দুরবস্থার ছবিটা স্পষ্ট করে দিল দেশের প্রথম আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনার রিপোর্ট। তবে কোন জাতের মানুষ অর্থনৈতিক বা সামাজিক ভাবে কী অবস্থায় রয়েছেন, সেই তথ্য আপাতত প্রকাশ করল না নরেন্দ্র মোদী সরকার।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে জনগণনা সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিহার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কি জাতপাতের হিসেব প্রকাশ থেকে পিছিয়ে এল সরকার? বীরেন্দ্র অবশ্য বলেন, ‘‘এমন কোনও বিষয় নেই। এর সঙ্গে নির্বাচনকে জুড়ে দেখা ঠিক নয়।’’ কিন্তু মন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, জনগণনা-রিপোর্টে যদি দেখা যেত, জাতপাতের নিরিখে সমাজের নীচের অংশ অর্থনৈতিক ভাবেও পিছিয়ে, তা হলে নীতীশ কুমার বা লালু প্রসাদদেরই সুবিধা হয়ে যেত। কারণ তাঁরা সমাজের নীচের অংশের নেতা হিসেবেই নিজেদের তুলে ধরেন। নতুন করে সংরক্ষণের দাবিও উঠত বলে অনেকের আশঙ্কা।
এমনিতেই বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে নীতীশ-লালু্ জোট করেছেন। তাঁদের পাশে রয়েছে কংগ্রেসও। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ— দু’জনের কাছেই বিহারের ভোট তাই ‘অ্যাসিড টেস্ট’। অনেকেরই ধারণা, এই পরিস্থিতিতে জাতিগত গণনার হিসেব প্রকাশ করে লালু-নীতীশের হাতে নতুন হাতিয়ার তুলে দিতে চাননি মোদী-অমিত। কারণ জাতপাত ও অর্থনীতির ভিত্তিতে ভেদাভেদ প্রকাশ পেলে আখেরে সুবিধা হবে লালু-নীতীশদেরই।
প্রকাশ্যে অবশ্য এ কথা মানতে চাননি সরকারের মন্ত্রীরা। ‘আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনা’-র রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে অরুণ জেটলি বা চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ যা প্রকাশ করেন, তা শুধুই বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে গ্রাম ভারতের পরিসংখ্যান। কোন জাতের মানুষের সংখ্যা কত, তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি কী, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়নি। প্রশ্ন ওঠে, জাতপাতের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান প্রকাশ হল না কেন? বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘এটি জনগণনা দফতরের অধিকর্তার সিদ্ধান্ত।’’ ভবিষ্যতে ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে কি না, স্পষ্ট করেননি তিনি। বীরেন্দ্রর যুক্তি, কেন্দ্র আর্থ-সামাজিক পরিসংখ্যান নিয়ে বেশি চিন্তিত। এর ভিত্তিতেই একশো দিনের কাজের মতো বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হবে। কারা পিছিয়ে আছেন, তাঁদের উন্নয়নের জন্য কী ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প দরকার, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাবে।
আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত গণনার কাজ শুরু হয়েছিল ইউপিএ-জমানায়, ২০১১-তে। ১৯৩১-র পর এই প্রথম দেশে এই ধরনের গণনা হল। কাজ শুরুর সময় বিভিন্ন দলের অনগ্রসর নেতারা দাবি তুলেছিলেন, কোন জাতের পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে কী অবস্থায় রয়েছে, তা দেখা হোক। ইউপিএ-নেতৃত্বেরও সেই দাবি ছিল। কিন্তু ইউপিএ-র মধ্যেই একাংশের আশঙ্কা ছিল, এই ধরনের গণনার ফলাফল প্রকাশ হলে নতুন করে জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণের দাবি উঠবে। এমনকী জাতপাতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে তুলতে পারে জাতপাতের ভেদাভেদও। তাই জনগণনার ফর্মে জাতি লেখার জায়গাটি রাখা হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক চলে। শেষ পর্যন্ত কার কত আয়, বাড়িতে টেলিফোন, গাড়ি বা রেফ্রিজারেটর রয়েছে কি না, সে সব জানতে চাওয়ার পাশাপাশি জাতপাতও জানতে চাওয়া হবে বলে ঠিক হয়।
সরকারের যুক্তি, জাতিগত পরিসংখ্যান প্রকাশ না হলেও অসুবিধা হবে না। বীরেন্দ্র জানান, দারিদ্রের বিভিন্ন দিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। যার ভিত্তিতে সার্বিক দারিদ্র দূরীকরণের পরিকল্পনা তৈরি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy