নয়াদিল্লির অন্ধ্র ভবনে জগন্মোহন রেড্ডি। ছবি: পিটিআই।
কার্যত একা হাতে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করেছেন তিনি। কিন্তু হলে কী হবে, কেন্দ্রে বিপুল ভাবে বিজেপি জিতে আসায় নরেন্দ্র মোদীদের সঙ্গে যে তাঁকে থাকতেই হবে, তা আজ স্বীকারই করে নিলেন অন্ধ্রের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি। মোদী সরকারের কাছ থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টিতে রাজি করানো যে কার্যত অসম্ভব, তা-ও আজ মেনে নিয়েছেন ওয়াইএসআর কংগ্রেস প্রধান।
আগামী ৩০ মে অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন জগন্মোহন। নরেন্দ্র মোদীকে সেই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে আজ দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি স্বীকার করে নেন, বিজেপি একক দল হিসাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এখন কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রশ্নে মোদীর উপরে নির্ভর করে থাকা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও রাস্তা নেই।
জগনের কথায়, ‘‘যদি বিজেপি ২৫০টি আসন পেত, তাহলে এই পরিস্থিতি হত না। সংখ্যার হিসেবে এখন আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই বিজেপির।’’ জগন্মোহন-ঘনিষ্ঠ শিবির সূত্রে বলা হয়েছে, বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শরিক নির্ভরতার স্বার্থে কদর বাড়ত জগনের। কিন্তু এখন আর তা হওয়ার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর আজ গোটা দিনই ছিল ঠাসা কর্মসূচিতে ভরা। শত ব্যস্ততার মধ্যেই আজ যে ভাবে জগনের জন্য প্রধানমন্ত্রী সময় বার করে বৈঠক করেন এবং পরে সেই বৈঠকের বিষয়ে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে জানান, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। বিজেপির মতে, মোদীর এই তাগিদ রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যার কথা মাথায় রেখেই। লোকসভায় বিপুল সাফল্য পেলেও রাজ্যসভায় এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় শাসক শিবির। ফলে গত বারের মতোই একাধিক বিল রাজ্যসভায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিকে অন্ধ্রপ্রদেশের জগন জিতে আসায় ওই রাজ্য থেকে আরও বেশি সংখ্যক রাজ্যসভার সদস্য পাবে তাঁর দল। তাই ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সমর্থন যাতে এনডিএ-র পক্ষে থাকে, তা নিশ্চিত করতেই একেবারে শুরু থেকে জগনের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন মোদী।
আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবিতেও দরবার করেন জগন। গত লোকসভায় ওই একই দাবিতে এনডিএ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। সে সময়ে নর্থ ব্লকে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দাবি করেছিলেন, অন্ধ্রপ্রদেশ যা আর্থিক সাহায্য দাবি করেছে, তার থেকে বেশি তাদের দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সাহায্য করা হবে। কিন্তু সেটিকে কোনও ভাবে বিশেষ মর্যাদা বলা সম্ভব নয়। আগামী পাঁচ বছরেও কোনও রাজ্যকেই বিশেষ মর্যাদার তকমা দিয়ে আর্থিক সাহায্য দিতে রাজি নয় মোদী সরকার। কারণ মোদী খুব ভাল করেই জানেন, একবার কোনও রাজ্যকে বিশেষ মযার্দার তকমা দিলেই প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে শরিক নীতীশ কুমার থেকে বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— অধিকাংশ রাজ্যই ওই মর্যাদার দাবিতে সরব হবে। তাই সূত্রের খবর, আজ সরকারের পক্ষ থেকে জগন্মোহনকে নতুন রাজ্যের নির্মাণে সব ধাঁচের আর্থিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বিশেষ মর্যাদার তকমা যে দেওয়া যাবে না, তা অনেকটাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি রাজ্য-রাজ্যনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই রাজনৈতিক ভাবে ওই দাবি থেকে সরাসরি সরে আসাও সম্ভব নয় জগনের পক্ষে।
কিন্তু বাস্তবে যে তা পাওয়া দুষ্কর, তা বুঝেই আজ জগনের স্বীকারোক্তি, ‘‘আজ প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হল। রাজ্যের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবিও জানিয়েছি তাঁকে। যদি ভগবান চান, তা হলে আগামী পাঁচ বছরে আরও পঞ্চাশ বার বৈঠক হবে মোদীর সঙ্গে। যত বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে, তত বার আমি অন্ধ্রকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবিটি তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy