অস্বস্তির শনিবার। স্বস্তিরও। আরও একটি দেশদ্রোহের মামলায় নাম জড়াল অন্তর্বর্তী জামিনে থাকা জেএনইউ ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের। যার শুনানি শুরু হবে ২৮ মার্চ। এ বার মামলা উত্তরপ্রদেশের আদালতে। গত ৮ মার্চ নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যকে ‘ভারতীয় সেনার পক্ষে অপমানসূচক’ তথা ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এই মামলা করেছেন হেমন্ত সিংহ নামে বুলন্দশহরের এক বজরঙ্গ দল কর্মী। যার জেরেই এই মামলা।
আজই আবার অন্য একটি দেশদ্রোহের মামলায় জামিন পেলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এসএআর গিলানি। দিল্লি পুলিশের ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও গিলানিকে ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক দীপক গর্গ।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিল্লি প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে গিলানি দেশবিরোধী স্লোগান দেন বলে অভিযোগ। সেই অনুষ্ঠানে আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ দায়ের হয়। যার জেরেই গ্রেফতার হন গিলানি।
আজ আদালতে গিলানির জামিন চেয়ে জোর সওয়াল করেন আইনজীবী সতীশ টামটা। বলেন, ‘‘গিলানি যে ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন বা এ নিয়ে অন্যদের উস্কেছেন, তার কোনও রেকর্ড নেই। তবু কেন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে?’’ একটি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতেই গিলানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। আজ আদালতে সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। তিনি জানান, জোরালো স্লোগান দেওয়া মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। তা হলে কীসের অনুষ্ঠান ছিল প্রেস ক্লাবে? সতীশ টামটার দাবি— অধ্যাপক সে দিন কাশ্মীর নিয়ে একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। দিল্লি পুলিশ অবশ্য আজও দাবি করেছে, আফজল গুরুর ফাঁসির বিরোধিতা মানে আদালতেরই অবমাননা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কানহাইয়ার বিরুদ্ধে প্রথম যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি হয়, তাতেও আফজল গুরুকে নিয়ে বিতর্কিত একটি অনুষ্ঠানে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও শনিবার দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা বলে সূত্রের খবর। ৮ মার্চ কানহাইয়ার বক্তব্যকে দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে আগেই প্রচারে নেমেছিল বিজেপির যুব মোর্চা। কী বলেছিলেন কানহাইয়া? বজরঙ্গ দলেরও দাবি, ওই অনুষ্ঠানে কানহাইয়া আফস্পা-র বিরোধিতা করেন। কাশ্মীরে সেনাবাহিনী মেয়েদের ধর্ষণ করছে বলেও অভিযোগ করেন। এগুলিই দেশবিরোধী বলে মনে করছে তারা। বজরঙ্গ দলের পক্ষে হেমন্ত সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথমে থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলেই এ বার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
সূত্রের খবর, নয়া মামলার খবর পৌঁছতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে জেএনইউ ক্যাম্পাসে। ডামাডোলের মধ্যেই আজ নয়া রেজিস্ট্রার নিয়োগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ আবার আজই মনুস্মৃতি পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে অভিযুক্ত ৫ ছাত্রের থেকে ব্যাখ্যা তলব করেছেন। ৮ মার্চের এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিজেপিরই ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিক্ষুব্ধ একটি অংশের বিরুদ্ধে।
তবে অধ্যাপক গিলানি জামিন পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশে স্বস্তির হাওয়া। দেশদ্রোহের মামলায় গত কালই জামিন পান ছাত্রনেতা উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়েই উমরের ছোট বোন বছর এগারোর সারাহ ফতিমা গত কাল বলেন, ‘‘অধ্যাপক যত দিন না ছাড়া পাচ্ছেন, এ লড়াই থামবে না।’’ সভায় স্লোগান ওঠে ‘আজাদি’ চেয়েও। আজ গিলানির জামিনের পরে উমরের ছোট বোনের সেই বক্তব্যের ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy