সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি নিজেই টুইট করেছিলেন— ‘শিলং যাচ্ছি। আইআইএমে পড়াতে।’ সন্ধেয় সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চেই বক্তৃতার সময় বেহুঁশ হয়ে ঢলে পড়লেন দেশের ‘মিসাইল ম্যান’। দ্রুত তাঁকে দু’কিলোমিটার দূরের বেথেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার একটু পরেই চিকিৎসকেরা ঘোষণা করেন, মারা গিয়েছেন দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বড় মাপের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কালাম। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। তবু তাঁকে আইসিইউয়ে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের চেষ্টা।
মেঘালয় রাজভবন সূত্রে জানানো হয়, এ দিন সন্ধে পৌনে ছটায় শিলং আইআইএমে এসে পৌঁছন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। আইআইএমে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ৬.৩৫ মিনিটে বলতে ওঠেন কালাম। পাঁচ মিনিট বলার পরেই পড়ে যান তিনি।
খবর পেয়ে হাসপাতালে যান রাজ্যপাল ভি ষণ্মুগনাথন ও স্বরাষ্ট্রসচিব পি বি ও ওয়ারজিরি। মুখ্যসচিব জানান, কাল সকালে কালামের দেহ গুয়াহাটি থেকে দিল্লি এবং পরে রামেশ্বরমে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এস সি গয়ালের সঙ্গে কথা বলেছেন। রামেশ্বরমেই শেষকৃত্য হবে কালামের।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে দেশে ৭ দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনিক দফতরগুলিতে সরকারি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শোকবার্তা পাঠিয়েছে পাকিস্তানও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন লন্ডনে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার প্রিয় ভারতীয়দের মধ্যে অন্যতম কালামজি। তাঁর সঙ্গে আমার এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল। আজ অত্যন্ত দুঃখের দিন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করবে, এ রাজ্যেও তত দিন তা পালন করা হবে। ওই সময় সরকারি কোনও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করা হবে না। সরকারি স্তরে কোনও নৈশভোজ বা ওই ধরনের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে বাঙালি শিল্পীরা ব্রিটেন সফরে গিয়েছেন, আগামিকাল লন্ডনে তাঁদের একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। তার পর একটি নৈশভোজেরও কথা ছিল। কিন্তু প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে সেই সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও।
এ দিন বিকেলে গুয়াহাটি এসেছিলেন কালাম। সেখান থেকে সড়কপথে যান শিলং। বিমানবন্দরে গুণমুগ্ধদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাও বলেন হাশিখুশি কালাম। তার অল্প পরেই কালামের অসুস্থতা ও মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বের সাধারণ মানুষ। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে বেথানি হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তরুণ গগৈয়ের কথায়, ‘‘অসম তথা উত্তর-পূর্বের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা ছিল। বারবার এখানে আসতেন তিনি। ওঁর সঙ্গে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছি। এত জ্ঞানী অথচ মাটির কাছাকাছি মানুষ কমই দেখা যায়।’’
আজ শিলংয়ে এসে কালাম বলেছিলেন, ‘‘কাল ব্রহ্মপুত্রের কাছে গিয়েছিলাম। আমার বড্ড প্রিয় নদ। এই নদের সংস্কার করতে চাই।’’
সেই কাজ আর শেষ হল না আবুল পকির জয়নুল আবদিন আব্দুল কালামের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy