আশ্রয়ের খোঁজে। সোমবার বন্যাবিধ্বস্ত কাশ্মীরে এএফপির ছবি।
কোথাও এক বোতলের দাম ১০০ টাকা, কোথাও ২৫০! বানভাসি কাশ্মীরে পর্যটকদের সব থেকে বড় চিন্তা পানীয় জল। টান খাবারেও। বিস্কুটের প্যাকেট কিনতেও গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি টাকা।
বৃষ্টি অল্প কমলেও ভূস্বর্গে আটক পর্যটকদের অবস্থা এমনই। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই হোটেলে। খাবার-জলের সঙ্কটে এটাও উপরি পাওনা। ২১ মার্চ কলকাতা থেকে জম্মু-কাশ্মীরের কাটরা পৌঁছয় ৩২ সদস্যের এক দল। দু’দিন আগে ভেরিনাগ পৌঁছয় দলটি। বিপর্যয়ের শুরু পরশু রাতেই। ভেরিনাগেই আটকা পড়ে যান তাঁরা।
ক্রমে বিপত্তি বাড়ে। প্রথমে সবাই একসঙ্গে থাকলেও পরে ১৭ জনকে নিয়ে পর্যটন সংস্থার মালিক অন্য হোটেলে চলে যান। অভিযোগ, তার পর থেকে সংস্থার কেউ ওই ১৫ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সেই সুযোগে হোটেল ভাড়া ও খাবারের দাম— দু’ই পাল্লা দিয়ে বাড়াতে থাকেন মালিক। টালিগঞ্জের বাসিন্দা সৌরাজ বসুর অভিযোগ, “হোটেল মালিক কার্যত সর্বস্বান্ত করে দিয়েছেন। ছোট্ট একটা ঘরের ভাড়া নিয়েছেন ২০০০ টাকা। হিটার তো দূর অস্ত্, লেপ-কম্বলও নেই! এক বোতল জলের জন্য নিচ্ছেন ৫০০ টাকা।”
প্রায় দেড় দিন অভুক্ত থাকার পরে আজ স্থানীয় সিআরপিএফের ১৬৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই পর্যটকেরা। তাঁরাই ওঁদের শ্রীনগরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সৌরাজবাবু বলেন, “আমাদের অবস্থা দেখে জওয়ানরা চা-বিস্কুট, পুরি-সব্জির ব্যবস্থা করেন। বয়স্কদের জন্য হিটারের ব্যবস্থাও করেন ওঁরা।” কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার পরে বাসে করে শ্রীনগরে পৌঁছে দেওয়া হয় পর্যটকদের। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শ্রীনগর বিমানবন্দরে পৌঁছন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাতে সিআরপিএফের অতিথিশালায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হয়। দেওয়া হয় অর্থ সাহায্যও।
দলটির রবিবার জম্মু থেকে কলকাতা রওনা হওয়ার কথা ছিল। এ দিন ওই ১৫ জনের জন্য বিমানের টিকিট জোগাড় করেছে রাজ্য প্রশাসন। আগামিকাল মুম্বই হয়ে কলকাতা পৌঁছবে ১৫ জনের দলটি। তবে শ্রীনগরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অবস্থা অনেকটাই ভাল। শহরের এক পর্যটন এজেন্ট নান্না ফোনে জানান, বৃষ্টিতে অসুবিধা হচ্ছিলই। এ দিন রাস্তা থেকে জল নেমেছে। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে বলে নান্নার দাবি।
কলকাতা থেকে কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছেন অরিজিৎ দে। শ্রীনগর থেকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘ভোর চারটের পর বৃষ্টি থেমেছে। হালকা রোদও উঠেছিল। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। আমরা আশপাশে ঘুরতেও বেড়িয়েছিলাম। নিচু এলাকাগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। সেই সব জায়গার ছবিই টিভিতে দেখানো হচ্ছে।’’ বন্যার খবর চাউর হতেই এ দিন ঘনঘন ফোন গিয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল এবং ভ্রমণ সংস্থার অফিসে। পুলিশ সূত্রের খবর, কাশ্মীরের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ না থাকায় আটক পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না লোকজন। ভরসা তাই প্রশাসনই। কাশ্মীরে আটকদের ব্যাপারে খোঁজ নিেত ০৯৯৫৮৩০০৪৯৯ নম্বরে একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।
বন্যার খবর পেয়ে সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু দিল্লিতে রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনার আর ডি মিনার সঙ্গে কথা বলেন। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আলোচনা করেন মন্ত্রী। তাঁর আশ্বাস, ‘‘পরিস্থিতির উপরে রাজ্য নিয়মিত নজর রাখছে।’’ শোভনবাবু জানান, বেহালার ধারাপাড়ার ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ জন বাসিন্দা কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সকাল থেকেই তাঁদের খোঁজ মিলছে না। এর মধ্যে একই পরিবারের ১৫ জন রয়েছেন। টালিগঞ্জ, হরিদেবপুর ও ভবানীপুরের এক দল বাসিন্দাও কাশ্মীরের ভেরিনাগে আটকে পড়েছেন। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জম্মু-কাশ্মীর সরকার ও সেনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পর্যটকদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ অনেকেই এপ্রিলে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেটা আদৌ আর সম্ভব হবে কি না, তা জানতে ঘন ঘন ফোন আসছে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার অফিসে। অনেক সংস্থা আবার ঝুঁকি না নিয়ে এ দিনই সফর বাতিল করে দিয়েছে। এমনই একটি ভ্রমণ সংস্থার তরফে নন্দিনী সেন বলেন, ‘‘৩১ মার্চ জম্মু-কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে, এমন খবর পেলেও কোনও ঝুঁকি নিচ্ছি না। তাই সফর স্থগিত রাখা হয়েছে।’’
আগামী শুক্রবার কাশ্মীরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল আর একটি ভ্রমণ সংস্থারও। এ দিন সকালে বন্যার খবর দেখেই কয়েক জন হাজির হন তাদের অফিসে। ভ্রমণ বাতিল করা হবে কি না,তা নিয়ে সংস্থার কর্তার বক্তব্য, রাত পর্যন্ত বাতিল বা স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। বুধবার পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আবহাওয়া দফতর অবশ্য বলছে, কিছুটা বৃষ্টি কমলেও আশঙ্কার মেঘ পুরোপুরি কাটেনি কাশ্মীরে। তারা জানিয়েছে, আগামী কিছু দিন জম্মু-কাশ্মীরে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy