যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।
ফৈজাবাদ জেলার নাম বদলে হচ্ছে অযোধ্যা। রামের বাবা রাজা দশরথের নামে হবে মেডিক্যাল কলেজ। অযোধ্যায় বিমানবন্দর গড়ে উঠবে রামের নামে।
মঙ্গলবার অযোধ্যায় দেওয়ালি উৎসবের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাম-রাজনীতিকে উস্কে দিয়ে এ সব ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণ কিংবা সরযূ নদীর তীরে রামের ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড়’ মূর্তি গড়ে তোলার প্রসঙ্গ তোলেননি তিনি। দু’দিন আগেই হরিদ্বারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছিলেন, অযোধ্যায় খুব তাড়াতাড়ি রামমন্দির গড়ে উঠবে। আর দেওয়ালিতে সেখানে গিয়ে রাম-ভক্তদের জন্য সুসংবাদ দিতে চলেছেন তিনি। জল্পনা ছিল, যোগী আজই সরযূ নদীর তীরে রামের ২০২ মিটার উঁচু মূর্তি তৈরির কথা ঘোষণা করবেন। যা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধন করা বল্লভভাই পটেলের মূর্তির থেকেও উঁচু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজ তেমন কিছুই ঘোষণা করেননি যোগী।
সরযূর তীরে রামের বিরাট মূর্তি তৈরির প্রস্তাব নিয়ে আগে থেকেই অবশ্য বিতর্কের ক্ষেত্র তৈরি ছিল। অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কিত জমিতে গড়া অস্থায়ী রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত মহন্ত সত্যেন্দ্র দাসের বক্তব্য ছিল, রামের জায়গা খোলা আকাশের নীচে নয়, মন্দিরে। মঙ্গলবার বিকেলে অযোধ্যার রাম কথা পার্কে যোগীর ভাষণের আগেই বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির গড়ে তোলার দাবিতে স্লোগান শুরু হয়ে যায়। আওয়াজ ওঠে ‘যোগীজি এক কাম করো/ রামমন্দির কা নির্মাণ করো।’ মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করলেও স্লোগান থামেনি। তবে চাপের মুখেও কী কারণে যোগী রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন না, তা নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন রামের নাম জুড়ে দিয়ে হাসপাতাল, বিমানবন্দরের মতো কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কথাই শুনিয়েছেন। আর সমালোচকদের তোয়াক্কা না করে জেলার নামকরণের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
রাম-রাজনীতিতে ঝড় তুলতে প্রস্তুতির অবশ্য ত্রুটি ছিল না। দেওয়ালি উৎসবে অযোধ্যা জুড়ে ট্যাবলো, শোভাযাত্রা। তিন দিন ধরে চলেছে উৎসব। আজ ছিল শেষ দিন। শহরজুড়ে রাখা ছিল রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্রের বিরাট মূর্তি। গোটা শহরকে সাজানো হয়েছিল আলোয়। অযোধ্যায় দেওয়ালির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কিম-জং-সুক। বিকেলে যোগী এবং কিম-জন-সুক যখন অযোধ্যায় পৌঁছন, রাম-লক্ষ্মণ-সীতা সেজে শিল্পীরা তাঁদের স্বাগত জানান। তবে তার পরে যোগী যে ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে সঙ্ঘ পরিবার ও সাধুসন্তদের দাবি মেনে রামমন্দির নির্মাণের জন্য কোনও অধ্যাদেশ আনার প্রসঙ্গ ছিল না। যোগী অবশ্য বলেন, ‘‘অযোধ্যা আমাদের গর্ব ও সম্মানের প্রতীক। অতীতকে জুড়তেই এখানে এসেছি।’’ রামমন্দির নির্মাণের শপথ নিয়ে দেওয়ালিতে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য আগে থেকেই প্রচার শুরু করেছিল বিজেপি। এ দিন অযোধ্যায় সরযূ নদীতে ৩ লক্ষেরও বেশি প্রদীপ ভাসানো হয়। যা বিশ্বরেকর্ড।
রাম-রাজনীতি করতে গিয়ে যোগী ফৈজাবাদের নাম বদলে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিআইয়ের শীর্ষ নেতা এস সুধাকর রেড্ডি। তাঁর মতে, প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এ সব ঘোষণা। আর এতে বিজেপির মুসলিম-বিরোধী ভাবনাই ফুটে উঠেছে। এ দিন যোগীর অনুষ্ঠানের আগে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের বক্তব্যও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি জানিয়ে দেন, অযোধ্যায় বাবরের নামে কোনও নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। তাঁর মতে, মামলা যে হেতু সুপ্রিম কোর্টে, তাই নরেন্দ্র মোদী কিংবা যোগীর পক্ষে এ নিয়ে কোনও কথা বলা সম্ভব নয়। তবে রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে প্রতিশ্রুতি পালনে দায়বদ্ধ বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy