তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে ভবিষ্যতে এমন টানাটানি হতে পারে, কখনও ভেবেছিলেন তিনি!
তিনি ভীমরাও অম্বেডকর, কাল মঙ্গলবার যাঁর ১২৫তম জন্মদিন। এই জন্মদিন পালন নিয়ে তথাকথিত দলিত দলগুলির উন্মাদনা বরাবরের মতোই রয়েছে। কিন্ত এ বার অম্বেডকরের জন্মদিন পালন নিয়ে একে অপরকে টেক্কা দিতে আসরে নেমেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। অম্বেডকরের জন্মস্থান মধ্যপ্রদেশের মউ-তে কাল তাঁর জন্মদিন পালন করবে সবর্ভারতীয় কংগ্রেস। মে মাসে মউ-তে এক দলিত সভা আয়োজন করে ১২৫তম জন্মবাষির্কী পালন শুরু করবেন রাহুল গাঁধী। বছর ভরের সেই কর্মসূচি স্থির করতে আজ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
আজ আসরে নেমে়ছে বিজেপিও। দলের ঠাকুর নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ ব্রাহ্মণ ও দলিতদের পাশে নিয়ে পংক্তি ভোজন করেন। তা ছাড়া আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে অম্বেডকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুম্বইয়ের ইন্দু মিলে অম্বেডকর স্মারক গড়ার জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে চুক্তিও করেছে মোদী সরকার।
কেন এই দড়ি টানাটানি? রাজনীতিকদের মতে, এর পিছনে রয়েছে দলিত ভোটব্যাঙ্ক।
স্বাধীনতার পরে প্রায় তিন দশক একচ্ছত্র দলিত ভোট পেত কংগ্রেস। নেহরুর মন্ত্রিসভার আইনমন্ত্রী ছিলেন অম্বেডকর। দলিত, মুসলিম ও ব্রাহ্মণ তথা উচ্চবণের্র ভোট নিয়ে জয়ের জন্য অনুকূল ভোট সমীকরণ ছিল কংগ্রেসের। পরবর্তী কালে সেই দলিত ভোট ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে। দলিত আকাঙ্খাকে উস্কে দিয়ে বহুজন সমাজ পার্টি থেকে শুরু করে ছোট ছোট দলিত দল তৈরি হয় দেশ জুড়ে। এখন দলিত ভোটের ছিঁটেফোঁটাটুকু পায় কংগ্রেস। তাই এখন অম্বেডকরের ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেদের জোড়ার চেষ্টায় নেমেছে কংগ্রেস। যদিও সনিয়ার দাবি, অম্বেডকরের সহজাত উত্তরাধিকার তাঁদেরই। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস তথা নেহরুর সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল অম্বেডকরের। দলিত দলগুলি মিথ্যা প্রচার করে যে অম্বেডকর ছিলেন কংগ্রেস বিরোধী। বরং কংগ্রেসের সঙ্গেই তাঁর মতাদর্শগত মিল ছিল। পরে তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের ক্ষমতায়নের জন্য সংরক্ষণ নীতি চালু করে সরকার।’’ পরোক্ষে অম্বেডকরকে নিয়ে বিজেপির তৎপরতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতীকী পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘‘দলিতের ক্ষমতায়ন নয়, ওঁদের লক্ষ্য জাতের রাজনীতিকে জিইয়ে রাখা।’’
সনিয়ার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিজেপি। নিজেদের কমর্সূচি নিয়েই তারা এখন ব্যস্ত। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের মতো তাঁদেরও উদ্দেশ্য দলিত ভোট কাছে টানা। কেন না অতীতে বিজেপি দলিত নেতা বঙ্গারু লক্ষণকে সভাপতি করলেও আম আদমির চোখে বিজেপি এখনও উচ্চবণের্র হিন্দু দল। লোকসভা ভোটে মোদী দলিত ভোটকে কাছে টানতে সমর্থ হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সরকার গঠনের দশ মাসের মাথায় সঙ্ঘ ও বিজেপির যৌথ সমীক্ষা হল, সেই ভোট খসতে শুরু করেছে। তাই দলিত ভোট ব্যাঙ্কে স্থায়ী অংশীদারি তৈরি করতে এখন সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy