Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কী করে পারল, বিস্মিত প্রাক্তন প্রেমিক

হুট করে এক দিন তাঁকে ছুড়ে ফেলেছিল মেয়েটা। সম্পর্কটা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ চৌধুরি। কিন্তু শেষে জেনেছিলেন, তাঁর প্রেমিকা জড়িয়ে পড়েছে একটি ‘বাঙালি ছেলে’র সঙ্গে।

ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন প্রেমিক বিষ্ণুপ্রসাদ চৌধুরি। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন প্রেমিক বিষ্ণুপ্রসাদ চৌধুরি। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত ও শীর্ষেন্দু শী
গুয়াহাটি ও করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

হুট করে এক দিন তাঁকে ছুড়ে ফেলেছিল মেয়েটা। সম্পর্কটা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ চৌধুরি। কিন্তু শেষে জেনেছিলেন, তাঁর প্রেমিকা জড়িয়ে পড়েছে একটি ‘বাঙালি ছেলে’র সঙ্গে। একরাশ অভিমান নিয়ে বিষ্ণুবাবু সরে এসেছিলেন তাঁর ‘পরী’র জীবন থেকে। যে পরীকে মুম্বইয়ের অভিজাত মহল গত প্রায় এক দশক ধরে চিনত এক মিডিয়া ব্যারনের স্ত্রী ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় হিসেবে।

তিনিই কি ইন্দ্রাণীর প্রথম স্বামী? বন্ধুদের কেউ কেউ যে বলছেন, ওই ‘বাঙালি ছেলে’ সিদ্ধার্থ দাসকে বিয়ে করার আগে তাঁর সঙ্গেই নাকি লুকিয়ে কামাখ্যায় গিয়ে বিয়ে করেন ইন্দ্রাণী? বিষ্ণুবাবু সাফ জানালেন, তাঁরা বিয়ে করেননি। তবে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরস্পরের বাড়িতে যাতায়াতও ছিল। ইন্দ্রাণীর বাবা-মা— উপেন্দ্র ও দুর্গারানি বরা তাঁকে স্নেহ করতেন।

সময়টা ছিল ১৯৮৩-’৮৪। ইন্দ্রাণী নয়, ‘পরী’ নামেই তখন তাঁকে চিনত গুয়াহাটি ক্লাব এলাকার পুরনো বনেদি পাড়া। স্থানীয় এক জনের কথায়, ‘‘১৯৮৩ সালে ইন্দ্রাণী প্রাইভেটে ম্যাট্রিক দিয়েছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে নাম কাটা যাওয়ায় ওর এক বছর নষ্ট হয়। তার পরে ইলেভেন-টুয়েলভ পড়তে যায় গুয়াহাটির কটন কলেজে।’’ সেন্ট মেরিজ স্কুলের ঠিক পাশেই ছিল তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিহারীলাল চৌধুরির বাড়ি। তিনিই বিষ্ণুবাবুর বাবা। স্কুলে পড়ার সময় অবশ্য বিষ্ণুবাবুর সঙ্গে আলাপ ছিল না ইন্দ্রাণীর। সেটা হয় কটন কলেজে পড়ার সময়।

আগের পাড়া ছেড়ে এখন অসম পুলিশের সদর দফতরের ঠিক উল্টোদিকেই বিষ্ণুবাবুর দোতলা বড় বাড়ি। আইন পাশ করার পর কিছুদিন প্র্যাকটিস করেছিলেন। তার পর সেই পেশা ছেড়ে এখন কয়লা, পর্যটন-সহ বিভিন্ন ব্যবসা করেন। আবার হোমিওপ্যাথিও করেন। ঘরোয়া আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রেমপর্বের নস্টালজিয়া। বিষ্ণুবাবুর কথায়, ‘‘কটন কলেজে পড়া যে পরীকে আমি চিনতাম, সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও সাধারণ জীবনযাপনই করত। টাকার লোভ দেখিনি। লেখাপড়ায় ভাল ছিল খুব। আমার উপরেও কোনও চাপ দেয়নি। যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ প্রেম ছিল আমাদের।’’

এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাঙল কেন?

বিষ্ণুবাবু বলছেন, কেন ভাঙল তাঁর মনে নেই। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে শিলং যাওয়ার পরেই হঠাৎ সম্পর্কটা শেষ করে দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। বিষ্ণুবাবুর কথায়, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম। ওর বন্ধুদের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরে শুনলাম এক বাঙালি যুবকের সঙ্গে ও জড়িয়ে পড়েছে। তখন বুঝলাম, একতরফা প্রেমের চেষ্টা করে লাভ নেই।’’

সেই প্রেমিকা যে পরে ক্ষমতার মোহে এই ভাবে এত পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বেন, নিজের মেয়েকে হত্যা করবেন— ভাবতে পেরেছিলেন?

বিষ্ণুবাবুর কথায়, ‘‘একেবারেই না। নিয়তি যখন, যাকে যেখানে নিয়ে যায়...। এত ভাল একটা মেয়ে কী করে নিজের মেয়েকে মারতে পারে? জানি না এই অভিযোগ সত্যি কি না। তবু মানতে মন চায় না। মেয়ে হিসেবে ইন্দ্রাণী তো খুবই ভাল ছিল। পার্টি করে বেড়ানো মেয়েও তো ছিল না! আর আমার আগে কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কি না, আমি জানতাম না।’’

অভিমান আজও পুরোমাত্রায়। কিন্তু ‘পরী’ সম্পর্কে একটাও বিরূপ মন্তব্য বেরোল না বিষ্ণুবাবুর মুখ থেকে। ১৯৯২ সালে বিয়ে করেছিলেন বিষ্ণুবাবু। কিন্তু ২০০৪-এ বাড়িতে আগুন লেগে মারা যান স্ত্রী। নিঃসন্তান বিষ্ণুবাবু আর বিয়ে করেননি।

বিষ্ণুবাবুর এক পুরনো পড়শি শুনিয়েছেন আরও একটি গল্প। তিনি দাবি করেন, তাঁর এক অবস্থাপন্ন বন্ধুকে মনে ধরেছিল পরীর। সেই বন্ধুটির সঙ্গে কথাও হয় আনন্দবাজারের। ভদ্রলোক বলেন, ‘‘একদিন দুপুরে খেতে বসেছি। পরী এসে হাজির। হঠাৎ আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক নিয়ে মাকে অনেক কথা বলতে লাগল। মা এক চড় মেরে পরীকে বের করে দিয়েছিল। এখন ভাবি, মা সে দিন চড়টা না মারলে আজ আমি কোথায়, কী অবস্থায় থাকতাম কে জানে!’’

আজ করিমগঞ্জে সিদ্ধার্থের ভাই শান্তনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইন্দ্রাণীর জন্যই তাঁর পরিবারের করুণ পরিণতি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে তিনি বিশেষ কথা বলতে চান না। শান্তনুবাবু অবশ্য মেনে নেন, ইন্দ্রাণীর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর ফের বিয়ে করেছিলেন সিদ্ধার্থ। তবে দাদার সঙ্গে এখন তাঁদের যোগাযোগ নেই। শুধু জানেন সিদ্ধার্থ কলকাতায় আছেন। বছর তিনেক আগে টেলিফোনে কথা হয়েছিল।

করিমগঞ্জেও আজ এক প্রস্ত নাটক হয়। সংবাদমাধ্যমে সিদ্ধার্থর মায়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর আজ দুপুরে করিমগঞ্জ পুলিশের কাছে একটি ফোন আসে। অজানা কণ্ঠ দাবি করে, তিনি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা অফিসার। মায়ারানি দাসের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর খুঁজছেন। পুলিশ সেই মুহূর্তে সেই তথ্য তাঁকে জানাতে পারেনি। কিছু ক্ষণ পর অন্য নম্বর থেকে আবার একটি ফোন আসে। এ বার দাবি, ‘‘কলকাতা থেকে ইন্দ্রনীল বলছি। আমি মায়ারানি দাসের ছেলে। মা বা ভাই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওদের ঠিকানা, ফোন নম্বর থাকলে দিন।’’

এর পর পুলিশ বনমালী রোডে মায়ারানির বাড়িতে গিয়ে শান্তনুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। গোটা ঘটনা জানিয়ে শেষ যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সেটি শান্তনুবাবুকে দিয়ে আসে। এর পর শান্তনুবাবুর সঙ্গে ওই অজানা কণ্ঠের কোনও যোগাযোগ হয়েছে কি না, জানা যায়নি। তবে নম্বরটি কার, তা খুঁজে দেখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE