তিনসুকিয়ায় হিন্দিভাষীরা আলফা-স্বাধীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বন্ধ প্রত্যাহার না করলে তাদের চরম শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুমকি দিলেন পরেশ বরুয়া। খাপলাং, এনডিএফবি, কেএলওর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথ মঞ্চ গড়া পরেশই এখন মঞ্চের নেতা। যৌথ মঞ্চের বিরুদ্ধে চলছে সেনা অভিযান। তিনসুকিয়ায় হিন্দিভাষী হত্যার পরে অসম পুলিশের বিরাট বাহিনীও আলফা দমন অভিযানে নেমেছে। ভারতীয় সেনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পরেশ আজ বলেন, ‘‘ভুটান থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। এ বার আমাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানো সহজ হবে না। লেট দেম কাম।’’
তিনসুকিয়ায় আলফা জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে হিন্দিভাষী ব্যবসায়ী ও তাঁর কন্যার। তার জেরে সেখানে ৩৬ ঘণ্টার বন্ধ চলছে। গত কাল সন্ধ্যায় মাকুমে বিক্ষোভকারীরা ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। মাকুমের ওসি-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ও বহু বিক্ষোভকারী জখম হন। পুলিশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রাতে ডুমডুমা হাসপাতালে জখম বিক্ষোভকারী দীনবন্ধু শর্মার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। পেঙেরি, মাকুম, ডুমডুমায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাতেই তিনসুকিয়ার এসপি অর্ণব ডেকাকে বদলি করে মুগ্ধজ্যোতি মহন্তকে নতুন এসপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এডিজি আর এম সিংহের নেতৃত্বে পুলিশের বিরাট বাহিনী আলফার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। অসমের ডিজিপি খগেন শর্মা দাবি করেন, ‘‘শিবসাগর-তিনসুকিয়ায় মায়ানমার থেকে আলফা জঙ্গিরা ঢুকছে। তারা বিশেষ করে বিজেপি নেতাদের নিশানা করতে পারে বলে আমাদের কাছে খবর আছে।’’
এর মধ্যেই আর্লফা প্রধান পরেশ বরুয়া এদিন সংবাদমাধ্যমে ফোন করে হুমকি দেন, ‘‘হিন্দিভাষীরা যদি আলফার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ না করে তবে আলফা তাঁদের চরম শাস্তি দেবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যবসায়ী নন্দলাল শাহ ও তাঁর কন্যা কাজল শাহকে আলফা সদস্যরা হত্যা করেছে বলা হচ্ছে, কিন্তু তার প্রমাণ কী?’’ পরেশের কথায়, ‘‘এমন কোনও ঘটনার কথা সামরিক শাখা থেকে আমায় জানানো হয়নি। ডিজিপি খগেন শর্মা আলফার বিরুদ্ধে লোক খ্যাপাচ্ছেন।’’
কেন্দ্র বলেছিল, আলফা নিঃশর্তে আলোচনায় না এলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। পরেশ বলেন: স্বাধীন অসম বাদে স্বায়ত্বশাসন বা অন্য কোনও বিকল্প নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। আলোচনাপন্থী নেতা অরবিন্দ রাজখোয়া, রাজু বরুয়া, শশধর চৌধুরীদের প্রসঙ্গে পরেশ বলেন, ওঁরা বিপ্লবী নেতা নন। নীতিহীন, বিশ্বাসঘাতক, চর। তাই দিল্লির সঙ্গে তাদের আলোচনা নিয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই। সেনা অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভুটানের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছি। ভারত যেন মনে রাখে মায়ানমার শিবির আর ভুটান, এক নয়। ২০০৩ সালে ভুটান সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত আমাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছিল। এখানে তা অত সহজ হবে না। আমরাও ভারতীয় বাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখছি।’’
অসম পুলিশের দাবি, পরেশ রাজ্যের বাইরে থেকে নাশকতা চালাচ্ছেন। তাই জনসমর্থনও হারিয়েছেন তিনি। পরেশের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যতদিন যুদ্ধপ্রস্তুতি চলে নেতাদের বাইরে থেকে, আন্তর্জাতিক সাহায্য নিয়ে প্রস্তুতি চালাতে হয়। অসম আলফার যুদ্ধক্ষেত্র। সেখানে সব সময় সেনাপ্রধানকে যেতে হবে না। সৈনিকরা যাবে। আমি অসমের সব প্রকৃত বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিককে চিনি। কোন গ্রামে কী সমস্যা আছে জানি। সব গ্রামে কাউকে না কাউকে আমি ফোনে যোগাযোগ করি। তবে অসমে কবে, কখন, কোথায় আসি তা গোপনীয়তার স্বার্থে বলা যাবে না।’’
হিন্দিভাষী হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে পরেশ বলেন, ‘‘আমি মাড়ওয়ারি, বিহারি বা হিন্দিভাষীদের অভিযোগের জবাব দিতে বাধ্য নই। অসমবাসী জানতে চাইলে বলব।’’ বিজেপি নেতারা তাঁদের লক্ষ্য কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন: পুলিশ, কংগ্রেস, বিজেপি সকলেই সমান শত্রু। আমরা কী করব তা বলতে বাধ্য নই। যা করার করে দেখাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy