Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

তথ্য আইনে ছ’টি জাতীয় রাজনৈতিক দল, দ্বন্দ্ব দুই কমিশনে

২০১৩ সালের ৩ জুন এক নির্দেশে কংগ্রেস, বিজেপি, বিএসপি, এনসিপি, সিপিআই ও সিপিএমকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় এনেছিল তথ্য কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

তথ্য কমিশনের মতের সম্পূর্ণ উল্টো মত দিল নির্বাচন কমিশন।

পাঁচ বছর আগে ছ’টি জাতীয় রাজনৈতিক দলকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় এনেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। এ বার নির্বাচন কমিশন এক নির্দেশে জানাল, রাজনৈতিক দল তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ে না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান তথ্য কমিশনের এহেন মতবিরোধ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি বলে মনে করছেন আইনজীবী ও রাজনীতিকেরা। আইনজীবীদের মতে, এই মতবিরোধের মীমাংসা করতে পারে একমাত্র আদালতই।

২০১৩ সালের ৩ জুন এক নির্দেশে কংগ্রেস, বিজেপি, বিএসপি, এনসিপি, সিপিআই ও সিপিএমকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় এনেছিল তথ্য কমিশন। এক নির্দেশে কমিশন জানিয়েছিল, রাজনৈতিক দল সরকারি কর্তৃপক্ষের সমমর্যাদার। তথ্য কমিশনের বেঞ্চ ওই নির্দেশে বলেছিল, ‘‘রাজনৈতিক দল আধুনিক রাষ্ট্রের এক বিশেষ সংস্থা। এরা সরাসরি সরকারের অঙ্গ নয়, কিন্তু নানা ভাবে সরকারি ক্ষমতার ব্যবহারের উপরে প্রভাব বিস্তার করে। তাই রাষ্ট্রের অন্য সব অঙ্গের জন্য স্বচ্ছতা প্রয়োজনীয় হলে রাজনৈতিক দলও তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।’’ তবে এর পরেও দলগুলি আরটিআই প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেছে। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে ছ’টি জাতীয় দল এবং সমাজবাদী পার্টির অনুদান সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিলেন পুণের বাসিন্দা বিহার ধারভে। জবাবে নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় তথ্য আধিকারিক জানান, রাজনৈতিক দল তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ে না। দলগুলি চলতি অর্থবর্ষে নির্বাচনী বন্ড থেকে পাওয়া অনুদান সংক্রান্ত রিপোর্ট কমিশনে পেশ করতে পারে। সেখান থেকে তথ্য মিলতে পারে। পরে এই মতকে সমর্থন করেছেন নির্বাচন কমিশনের উচ্চতর আধিকারিক কে এফ উইলফ্রেডও। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অবশ্য উইলফ্রেড জানান, তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, সব রাজনৈতিক দল আরটিআই-আওতায় পড়ে না। পূর্বোক্ত ছ’টি জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় তিনি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।

দিল্লির আইনজীবীদের একাংশের মতে, দুই কমিশনের মতবিরোধ মেটাতে পারে একমাত্র আদালত। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, আর পাঁচটা সংস্থা এবং রাজনৈতিক দল এক নয়। তাই রাজনৈতিক দলকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কোন দল কী ভাবে কাজ করবে, কী ভাবে সংগঠন সাজাবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তথ্যের অধিকার আইনে দরজা খুলে দিলে আমি যদি কারও প্রতিপক্ষ হই, তা হলে তো ওই হাতিয়ারে বিপক্ষের তথ্য বার করার চেষ্টা করব! এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। আর, কোনও বিষয়ে একটা দলের কী অবস্থান বা সিদ্ধান্ত, তা তো তারা জনসমক্ষে জানিয়েই দেয়।’’

রাজনীতিকদের একাংশের মতে, কেবল সরকারি দফতরকে মাথায় রেখেই তথ্যের অধিকার আইন তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে গেলে আইনের স‌ংস্কার প্রয়োজন। রাজনীতিকদের আরও দাবি, আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনে দলগুলিকে আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতে হয়। তাই তাদের আয়-ব্যয় নজরদারির বাইরে নেই। জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভার নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘কেবল জাতীয় দলের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে কেন? নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে সব নথিবদ্ধ দলকেই আওতায় আনতে হবে।’’ রাজনীতিকদের একাংশের দাবি, শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ বেসরকারি কোম্পানিও মানুষের অর্থ নিয়ে কাজ করে। তাদেরও তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনা উচিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE