বরাক উপত্যকায় ইদের নমাজ আদায়ে আজ সব আকর্ষণ টেনে নেয় তোপখানা ইদগাহ। ধর্মীয় গুরু তৈয়িবুর রহমান বড়ভুইয়া এ বার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে নমাজ পড়ার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুণ্যার্থীরা শিলচরের শহরতলি, তোপখানায় ভিড় জমান। পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও কাটিগড়া, করিমগঞ্জ, বদরপুর এবং হাইলাকান্দি থেকেও লোকজন আসেন। অন্যান্য বছর ইদগাহর ভিতরে সকলের প্রার্থনার জায়গা হলেও এ বার চত্বর ছাড়িয়ে ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার উপরেও বসার ব্যবস্থা করা হয়। মৌলানা তৈয়িবুর রহমান অবশ্য শারীরিক অসুস্থতার জন্য নমাজ পড়াননি। তিনি ধর্মীয় উপদেশ সহ বক্তৃতা করেন। নমাজ পড়ান গণিরগ্রাম মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত সুপার আয়ুব আলি বড়ভুইয়া।
‘আল্লামা’ বলে সম্মানিত তৈয়িবুর রহমান বড়ভুইয়া তাঁর বক্তৃতায় ভারতকে বারবার ‘হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি সোজাসাপ্টা বলেন, ‘‘যেখানে থাকব, সেখানকার শান্তি-সম্প্রীতি-ঐক্যের কথা আমাদের ভাবতে হবে।’’ তিনি আল্লাহর কাছে ‘হিন্দুস্তান’-এর শান্তি কামনা করেন। শুধু উত্সবের দিন বলে নয়, সব সময় গরিবদের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য তিনি সকলকে পরামর্শ দেন।
ইদের দিনে অন্য ধর্মের লোকেদের ইদগাহে গিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর যে রেওয়াজ ক-বছর থেকে শিলচরে চলছে, এ বারও তা অব্যাহত রয়েছে। প্রচুর নতুন মুখও দেখা গিয়েছে এ বারের সম্প্রীতি-সভায়। ছিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন, ডেভেলপমেন্ট কমিশনার এম কে দাস, সুবীর কর, সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, বিভাসরঞ্জন চৌধুরী, সাধন পুরকায়স্থ, সন্তোষ চক্রবর্তী-সহ অনেকে। শিলচর ইদগাহ পরিচালন কমিটির পক্ষে আফতাবুর রহমান বড়ভুইয়া, তৈমুর রাজা চৌধুরী, ইমাদউদ্দিন বুলবুল সবাইকে স্বাগত জানান।
কাছাড় জেলার কাজিডহর ও আরকাটিপুরে ইদগাহে পুরুষদের সঙ্গে বসে নমাজ আদায় করেছেন মহিলারা। কাজিডহরে পর্দা দিয়ে নারী-পুরুষ পৃথক করা ছিল। আরকাটিপুরে এ বার পর্দাও সরিয়ে নেওয়া হয়। উবাইদুর রহমান, ইফজুল আলি বড়ভুইয়ারা বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্মে কোথাও নারীদের ইদগাহে যেতে বারণ করা হয়নি। তাই স্ত্রী-মা-বোনদের সঙ্গে নিয়ে নমাজ আদায় করি। এতদিন তাঁরা এসে পর্দার আড়ালে বসতেন। এ বার তা সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। এক সঙ্গেই যখন প্রার্থনা করব, তখন পর্দার বিভাজন কেন।’’
কাজিডহরেও নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বসে নমাজ আদায় করেন। ১৯৮৯ সালে সেখানকার মহিলারা প্রথম নমাজের জন্য বেরিয়ে আসেন। প্রতি বছর তাঁদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানকার মকবুল হোসেন বড়ভুইয়া বলেন, প্রার্থনায় নারীদেরও সমান অধিকার। বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত নয়। এ ছাড়া, সবচেয়ে পবিত্রস্থান মক্কায় নারী-পুরুষ একসঙ্গে বেরিয়ে নমাজ পড়লে অন্যত্র বাধা হবে কেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy