চাপের মুখে শশিকলা ও তাঁর পরিবারকে দল ও সরকারের কাজকর্ম থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামী ও তাঁর সহযোগীরা। আজ রাতে পলানীস্বামীর বাড়িতে এক বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান অর্থমন্ত্রী ডি জয়কুমার। জয়কুমারের কথায়, ‘‘শশিকলার ভাইপো টিটিভি দিনকরণ ও তাঁর পরিবারকে দল ও সরকারের কাজকর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তামিলনাড়ুর মানুষও এটাই চান। শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করবে।’’
দিনকরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিল পলানীস্বামী শিবির। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরোধী পনীরসেলভম শিবিরের সঙ্গে হাত মেলানোর কথাও ভাবছিল তারা। আপসের শর্ত হিসেবে শশিকলা ও তাঁর আত্মীয়দের সরানোর কথা বলেছিলেন পনীরসেলভম।
শশিকলাকে মুছে ফেলতে পনীরসেলভমের মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে বিজেপিও। তামিলনাড়ুর তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দফায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের লড়াইতে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দু’মাসের মধ্যে কার্যত দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। পরিস্থিতি দেখে বরং পিছু হটেছেন মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পনীরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে আপসের রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন তিনি। পলানীস্বামী বুঝতে পারছেন, যে মন্ত্রী-বিধায়কদের ভরসায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী, তাঁদের অনেকেই চুপিচুপি শিবির বদলে ফেলেছেন। আগামিকাল আরও কিছু বর্ষীয়ান নেতা শিবির পাল্টাতে পারেন। একদা শশিকলা ঘনিষ্ঠ এডিএমকে থাম্বিদুরাইয়ের কথায়, ‘‘সমর্থকেরা চান দু’শিবির এক হোক। মিটমাটের চেষ্টা চলছে। পলানী শিবিরের বেশ কিছু মন্ত্রী কথা বলছেন পনীর গোষ্ঠীর সঙ্গে।’’
একরোখা পনীর প্রথম প্রস্তাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এডিএমকে দলে শশিকলা বা তাঁর ভাইপো দিনকরণের ছায়াও রাখা চলবে না। এই দাবির পক্ষে রয়েছেন অধিকাংশ নেতা। পনীরসেলভমের কথায়, ‘‘পরিবারতন্ত্র রুখতে দলের প্রতিষ্ঠাতা এমজিআর নিজের ভাইকেও রেয়াত করেনি। এ বারও পরিবারতন্ত্র মানা হবে না।’’ শশী না সরলে যে আখেরে সব হারাতে হবে তা বুঝেছেন মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামীও। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী পদে পলানীর পরিবর্তে পনীরসেলভমকে বসানোর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়করা। পনীর গোষ্ঠী প্রয়োজনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ বা উপমুখ্যমন্ত্রীর পদটি পলানীর জন্য ছাড়তে রাজি আছে। তৃতীয়ত, পলানী গোষ্ঠী ঠিক একই প্রস্তাব রেখেছে পনীর শিবিরের উদ্দেশে। পনীরের জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক পদ ও উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চায় তারা। সমস্যা হল এক জন তিন বারের ও এক জন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। ফলে উভয়ের পক্ষেই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাটা সম্মানহানির সামিল। তাতেই আপাতত আলোচনা আটকে রয়েছে।
শশিকলা জেলে যাওয়ার আগে যে ভাবে ভাইপো দিনকরণকে দলের সাধারণ সম্পাদক করে গিয়েছিলেন তা ভাল ভাবে নেননি অনেকই। এরপর একের পর এক দুর্নীতি অভিযোগে জড়িয়েছেন তিনি। দিনকরণ প্রশ্নে শশী শিবিরেও অস্বস্তি বাড়ছিল। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন পনীরের মাধ্যমে শশী-পলানী শিবিরে মোক্ষম ঘা মারতে চাইছে বিজেপি। পনীরসেলভমের উদ্দেশে বিজেপির স্পষ্ট বার্তা, শশিকলা প্রশ্নে কোনও আপস করা যাবে না। বিজেপির এই সক্রিয়তা দেখে তামিলনাড়ুতে অস্থিরতা সৃষ্টির যে অভিযোগ বিরোধী শিবির করেছে তা আজ উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার পিছনে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy