কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন। -ফাইল চিত্র।
‘শূন্য’ বা ‘জিরো’ না জন্মালে অঙ্কশাস্ত্রের জন্মই হত না। সেই শূন্যের জন্মদাত্রী ছিল আমাদের ভারত ভূখণ্ডই। আর অঙ্কের অস্তিত্ব না থাকলে বিজ্ঞানই ভূমিষ্ঠ হত না!
কিন্তু তা বলে বিজ্ঞানের যা যা আবিষ্কার হয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, তার সব কিছুরই ‘বীজ’ ছিল প্রাচীন ভারতে বা প্রাচীন ভারত অনেক এগিয়ে ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের চেয়ে, গত কয়েক বছরে তা প্রমাণ করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। তাঁরা কখনও বলেছেন, ভুল, বড়ই ভুল ছিল ডারউইনের বিবর্তনবাদে। কখনও বলেছেন, ঈশ্বরই যে এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা, তা বড় বড় বিজ্ঞানীরাও বলে গিয়েছেন।
সেই প্রবাহে নতুন সংযোজন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধনের মন্তব্য। শুক্রবার ইম্ফলে ১০৫তম জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধন করে হর্ষবর্ধন বলেন, ‘‘আইনস্টাইনের চেয়ে বেদ এগিয়ে। স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, আইনস্টাইনের বিখ্যাত ‘‘e=mc2’’ সূত্রটির চেয়েও উন্নততর তত্ত্ব থাকতে পারে বেদে।’’
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধনের টুইট
কোথায় পেলেন এই তথ্য, সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ‘‘আসুন, দেখাব।’’
হর্যবর্ধন যা ‘দেখাব’ বলে সাংবাদিকদের কাল জানিয়েছিলেন, শনিবার তা দেখিয়ে দিল একটি অনলাইন সংবাদসংস্থা ‘অল্ট নিউজ’। দেখাল, www.serveveda.org নামের একটি ওয়েবসাইটে চালু একটি প্রতিবেদনের তথ্যের উপর নির্ভর করেই জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে হাজির মান্যগণ্য বিজ্ঞানীদের সামনে ওই কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী। আর এই প্রতিবেদনটিকেই জাল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৩ সালের নভেম্বরে। সাইটটি রয়েছে ‘আই-সার্ভ’ বা, ‘ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাস’ সংস্থার নামে।
‘আই-সার্ভ’ বা, ‘ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাস’-এর সেই ওয়েবসাইট
তার মানে, ‘ফেক নিউজে’ ঠকেছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীও? তার মানে, জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চেও কোনও তথ্যের সত্যতা যাচাই না করেই তা বলে দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীরও?
আরও পড়ুন- আইনস্টাইনের চেয়ে বেদ এগিয়ে, মানতেন হকিং, দাবি বিজ্ঞান মন্ত্রীর
আরও পড়ুন- হারের জের! ৩৭ আমলাকে সরালেন যোগী
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্যপ্রিন্ট’-এর সায়েন্স এডিটর সন্ধ্যা রমেশের টুইট
অনলাইন সংবাদসংস্থা ‘অল্ট নিউজ’-এর তদন্তে এও জানা গিয়েছে, ‘আই-সার্ভ’-এর ওই ওয়েবসাইটের করা ‘খবর’-এর বছরদু’য়েক আগে, ২০১১ সালে ‘hari.scientist’ নামে একটি ফেসবুক পেজে স্টিফেন হকিংয়ের নামে ওই মন্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছিল। আর সেই ফেসবুক পেজের ‘ইউজার’ পেজ চালাতেন ‘স্টিফেন হকিং’ নামে, হকিংয়ের ছবি লাগিয়ে। যেন সত্যি সত্যিই হকিং বলছেন ওই কথা তাঁর ‘নিজস্ব ফেসবুক পেজ’-এ! অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্যপ্রিন্ট’-এর সায়েন্স এডিটর সন্ধ্যা রমেশ এই তথ্য জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy