২৬/১১-র হামলা তো কিছুই নয়, আগামী দিনে আরও বড় জঙ্গি নাশকতার শিকার হতে পারে ভারত। কোনও জঙ্গি নেতা নন, আজ এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের সেরা কম্যান্ডোবাহিনী এনএসজি-র প্রধান জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী। দীপাবলির আগে তাই গোটা দেশে নিরাপত্তার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো হয়েছে রেল স্টেশন ও বিমানবন্দরগুলিতেও।
ছ’বছর আগে মুম্বইয়ের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছিল কসাবেরা। গোয়েন্দারা মনে করছেন, বহু ব্যবহৃত সেই মডেলে আর হামলা চালাবে না জঙ্গিরা। পরিবর্তে একাধিক শহরের বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে হামলা করার ছক কষছে আল-কায়দার সদস্য হরকতুল মুজাহিদিন, জইশ-ই-মহম্মদ বা লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনগুলি। একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা হামলার পরিকল্পনা করছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। আর জঙ্গি সংগঠনগুলির মধ্যে সূত্রধরের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-কে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, যত বেশি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া নিরাপত্তাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করতেই এমন ছক কষছে সংগঠনগুলি। ফলে হামলার মূল উৎসস্থলটি খুঁজে বার করতে ধন্দে পড়বে নিরাপত্তা বাহিনী।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহর ছাড়াও জঙ্গি নিশানায় জায়গা করে নিয়েছে গোয়ার মতো ছোট রাজ্যও। সারা বছরই বিদেশি পর্যটকেরা ভিড় জমান গোয়ায়। সে জন্যেই গোয়া জঙ্গিদের তালিকায় নতুন সংযোজিত হয়েছে বলে মত ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী। আজ হরিয়ানার মানেসরের এনএসজি সদর দফতরে হওয়া ৩০-তম বার্ষিক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, “কিছু দিন আগেই জঙ্গি সংগঠনগুলি গোয়া ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরের বিভিন্ন স্থানে টহল দিয়ে গিয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। হামলার আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন বিমানবন্দরেও।” সম্প্রতি আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির একটি ভিডিও বার্তা জনসমক্ষে আসায় ঘুম ছুটেছে কেন্দ্রের। ওই ভিডিওয় ভারতের মাটিতে সন্ত্রাস ছড়ানোর হুমকি দেন জাওয়াহিরি। আসন্ন দীপাবলির মরসুমে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পরে বলে রাজ্যগুলিকে একপ্রস্ত সতর্ক করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এই পরিস্থিতিতে আজ যে ভাবে এনএসজি-র ডিজির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও সন্ত্রাস প্রশ্নে মুখ খুলেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আজ পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “ভারতের উন্নতির ছবি অনেকেই সহ্য করতে পারছে না। তাই অস্থিরতা তৈরির চক্রান্ত হচ্ছে। শুধু ভারতে নয়, বিশ্বে যে ভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা উদ্বেগজনক।”
রাজনাথের ওই উদ্বেগ অমূলক নয়। কেন না সম্প্রতি ফের সিমি-র নেটওয়ার্ককে সক্রিয় ভাবে কাজে লাগানো শুরু করেছে আল কায়দা। দেশবিরোধী কাজের অভিযোগে প্রায় দেড় দশক আগে নিষিদ্ধ হয় সিমি। গত কয়েক বছরে এ দেশে আল কায়দার হয়ে কাজ করত ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। কিন্তু সম্প্রতি এনআইএ-র ধরপাকড়ে তাদের কোমর ভেঙে যাওয়ায় আবার সিমির নেটওয়ার্ককে চাঙ্গা করে তোলা হচ্ছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ কাণ্ডও গোয়েন্দাদের কাছে চিন্তার বিষয়। জয়ন্তবাবুর অবশ্য দাবি, “আমার কম্যান্ডোরা সব ধরনের হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও প্রস্তুত থাকার জন্য আগামী মাসে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছে।”
নেতাদের সুরক্ষা ও জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় কেন্দ্রের বড় ভরসা এই এনএসজি কম্যান্ডোরাই। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সাহায্যের অভাবে সময়োপযোগী উপকরণ কেনা মাঝে মধ্যেই থমকে যায়। বিষয়টি নিয়ে গত মাসেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে দরবার করেন জয়ন্তবাবু। আজ মানেসরের অনুষ্ঠানে রাজনাথ ঘোষণা করেন, কেন্দ্র এনএসজি-র বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ ৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযানের সময় কম্যান্ডোরা যে বিশেষ ধরনের সুরক্ষা পোশাক পরেন, তার বাজেটও বাড়ানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy