চেনা মুখের ভিড়ে। সোমবার শিলচরে দিলীপ পাল। ছবি: হিমাংশু দে
প্রোটোকলের গেরোয় আটকে গেলেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল। পুরসভায় নাগরিক সমস্যা নিয়ে নিয়মিত হইচই বাঁধিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বিজেপি নেতা এখন অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। ১৭ মাস বিধায়ক থাকাকালীনও রাস্তাঘাটের জন্য লাগাতার অনশন করেছেন। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে শহরে হেঁটে বেড়ানোর জন্য তাঁর ‘টিআরপি’ যে নিয়মিত বাড়ছিল, প্রমাণ মেলে ভোটের ফলাফলে।
তিনিই প্রোটোকলের জন্য শুক্রবার পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে শিলচর আসতে পারেননি। বরাকে বিজেপির সব বিধায়ক একযোগে বিজয় মিছিলে পা মেলালেও, দূরে থাকতে বাধ্য হলেন দিলীপবাবু। আজ নিজের শহরে এলেন বটে, কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় কি না, তা ভেবেই সব কাটছাঁট করতে হয়। অনুগামীরা তাঁকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসেন, মিছিল করেন, জায়গায় জায়গায় কর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় হয় —সবই ছিল। তবু গেরুয়া উল্লাস যেন অনেকটাই অনুপস্থিত। হেঁটে বেড়ানো মানুষটি এ দিন নিজের এলাকা পরিক্রমা করলেন এসি গাড়িতে চেপে। নেই সেই ঝোলাব্যাগ। সামনে ট্রাফিক পুলিশ হুটার বাজিয়ে তাঁর চলার পথ তৈরি করে দিল। সামনে-পিছনে এসকর্ট।
দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছেই কর্মীদের শুনিয়ে দেন, ‘‘ডেপুটি স্পিকার একটি সাংবিধানিক পদ। ফলে সব সময় দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সম্ভব হবে না। কেউ যেন আমাকে ভুল না-বোঝেন। আমি শিলচরের জনগণের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’’
তুমুল করতালির মধ্যে ডেপুটি স্পিকার বলতে থাকেন, ‘‘শুধু বিজেপি নয়, সর্বসম্মত ভাবে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছি। তাই অসম পুনর্নির্মাণের কাজে ঝাঁপাতে হবে। কে কোন দলের লোক, বড় কথা নয়। সবাইকে নিয়ে এই কাজ করতে হবে।’’
ডেপুটি স্পিকার পদ গ্রহণের দরুন শিলচরের জন্য কাজের সুযোগ কমে যাবে, সে আশঙ্কা তাঁরও ছিল। আজ দিলীপবাবু দলীয় কর্মীদের শোনান, ‘‘তাই দায়িত্ব গ্রহণে আপত্তি করেছিলাম। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিরা জোর দিয়ে বললেন, দল সরকারে রয়েছে। ফলে কাজের সমস্যা হবে না। তাঁরাই দেখেশুনে শিলচরের জন্য কাজ করবেন। মুখ্যমন্ত্রীও আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়া, দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে তো হবেই।’’
এই পদ কি আপনার রাজনৈতিক জীবনকে সঙ্কুচিত করে দিল? সাংবাদিকদের প্রশ্নে দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘আমাকেও অনেকে এ কথা বলছেন। কিন্তু আমি আগেই বলেছি, পরিষদীয় রাজনীতিতে বেশিদিন থাকব না। একটা বয়স হলে নবীনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ডেপুটি স্পিকার পদে তাঁকে নিযুক্তির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল আসলে বরাকবাসীর কাছে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছেন।’’
মন্ত্রিত্বের দাবি থেকে ছিটকে পড়াকেও দিলীপবাবু বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘স্বপ্নেও ভাবিনি, এমন মর্যাদা আমি পাব। ব্যবসায়ীর ছেলে। বাবাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতাম। কোনও লক্ষ্য নির্দিষ্ট ছিল না। দল ক্ষমতায় আসার পরও মন্ত্রী হওয়ার বাসনায় ছিলাম, এমনও নয়। সবসময় শুধু একটাই ভাবনা, আমি যেন পথভ্রষ্ট না হই।’’
মিছিলের পর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়ি গিয়ে তাঁর পা ছুয়ে প্রণাম করেও ডেপুটি স্পিকার ওই এক কথাই বললেন, ‘‘আশীর্বাদ করুন, আমি যেন পথভ্রষ্ট না-হই।’’ বেরিয়েই দাঁড়িয়ে থাকা জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ গাড়িতে ওঠেন ডেপুটি স্পিকার। ট্রাফিকের হুটার বাজানো শুরু। সামনে পিছনে এসকর্ট। এগোতে থাকে তাঁর কনভয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy