নতুন মার্কিন প্রশাসনের চাপে লোক দেখানো পাক পদক্ষেপ? নাকি নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এগোনো? এই দু’টি সম্ভাবনাকে সামনে রেখে জামাত উদ দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে পাক সন্ত্রাস-বিরোধী আইন প্রয়োগকে মাপতে চাইছে দিল্লি।
প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে বিশদে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে না। তবে ঘরোয়া ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি তৈরি হবে, এক কথায় তারা সমস্ত সন্ত্রাসঘাঁটি নির্মূল করে দেবে—এমনটা আমরাও আশা করছি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যে বার্তাগুলি ইসলামাবাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে তা ইতিবাচক। একে কাজে লাগিয়ে মুম্বই এবং পঠানকোট হামলার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে চাইছি আমরা।’’
বিদেশ মন্ত্রক কর্তাদের মতে, এটা ঘটনা যে হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত যেটুকু পদক্ষেপ করেছে নওয়াজ শরিফ সরকার তা এর আগে ভাবাও যায়নি। দীর্ঘদিন ধরেই পাক সেনা তথা আইএসআই-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন হাফিজ। তাই বার বার ভারত হাফিজকে গ্রেফতারের দাবি জানালেও নির্বিবাদে পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-বিরোধী বক্তৃতা এবং সভা করে গিয়েছেন এই জঙ্গি নেতা। তবে এ বার তিনি সন্ত্রাস-বিরোধী আইনের আওতায় আসার ফলে জনসভা আর করতে পারবেন না।
হাফিজের গ্রেফতারিকে সমর্থন করেছে পাক সেনা। সাউথ ব্লকের কর্তাদের ধারণা, এ যাত্রা অন্তত সেনাকে পাশে পেয়েছেন শরিফ। পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান কমর বাজওয়া দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার কাজকে। ভারত সম্পর্কে সম্প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন তিনি। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারতীয় গণতন্ত্র সে দেশের সেনাবাহিনীকে রাজনীতির থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কূটনীতিকরা জানান, ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রশংসা করা হচ্ছে পাক সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্তর থেকে — এটা সে দেশের ইতিহাসে অভিনব একটি ঘটনা।
কূটনীতিকদের মতে, পাক রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছেন বাজওয়া। শরিফও একের পর এক পদক্ষেপ করে ভারতের সঙ্গে আলোচনার বন্ধ দরজাটি খোলার চেষ্টা করে চলেছেন।
আরও পড়ুন:
শ্বশুর-শাশুড়ির দিকেও সেবার হাত, পরিবারের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প
গত কয়েক সপ্তাহে আটক ভারতীয় সেনা বাবুলাল চহ্বাণ ও বেশ কিছু আটক ভারতীয় মৎস্যজীবীর মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন নওয়াজ শরিফ। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার আব্দুল বসিতই সে দেশের পরবর্তী বিদেশসচিব হবেন, এটা প্রায় স্থির ছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বদল ঘটিয়েছেন নওয়াজ। কারণ, ভারতের সঙ্গে গত তিন বছরে সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেননি বসিত। উল্টে হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে বৈঠক করে গোটা আলোচনার সম্ভাবনাতেই জল ঢেলে দিয়েছিলেন। বিদেশ মন্ত্রকের একটি অংশ মনে করে, দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটি তখন শুরু করতে পারলে সে দেশের মোল্লাতন্ত্র ও আইএসআই-কে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন শরিফ। সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, ভারতের সঙ্গে আলোচনার নয়া অধ্যায় শুরু করতেই তেহমিনা জনজুয়াকে নতুন বিদেশ সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছেন শরিফ।
দিল্লিও ছোট ছোট পাল্টা বার্তা দিচ্ছে ইসলামাবাদকে। ইনদওরে দক্ষিণ এশিয়া স্পিকার সম্মেলনে পাক পার্লামেন্টের স্পিকারকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। করাচি সাহিত্য উৎসবে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল হয়েছে ভারত। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘এ সব তিন মাস আগেও ভাবনার অতীত ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy