এমনটা সিনেমাতেই দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন ঘটনার কথা খুব একটা জানা নেই চিকিত্সকদেরও। চমকে দেওয়া ঘটনাটা ঘটেছে রাজস্থানে। দুর্ঘটনা, স্মৃতিভ্রংশ, তার পর আবার এক দুর্ঘটনা এবং হঠাত্ই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ফিরে পাওয়া। আর স্মৃতি ফিরে পেয়ে সাত বছর পরে নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন ‘মৃত’ ধর্মবীর সিংহ।
রাজস্থানের আলওয়ারের বাসিন্দা ধর্মবীর কর্মসূত্রে দেহরাদুনে ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর গাড়ি চালাতেন। গাড়ি চালানোর সময়ই ২০০৯ সালে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি। রাস্তার ডিভাইডার ভেঙে খাদে পড়ে যায় গাড়ি। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য দুই সঙ্গীকে উদ্ধার করা গেলেও ধর্মবীরের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। তিন বছর ধরে খোঁজ চালানোর পর সেনাবাহিনী থেকে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। আস্তে আস্তে পরিবারের লোকেরাও তাঁর ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
হঠাৎ এক রাতে কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খোলেন ধর্মবীরের বৃদ্ধ বাবা কৈলাস যাদব। এ কাকে দেখছেন? সামনে দাঁড়িয়ে সাত বছর আগে ‘মরে যাওয়া’ ছেলে ধর্মবীর। অগোছালো, শীর্ণকায়, উস্কোখুস্কো চুল। মাঝখানে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ছেলেকে চিনে নিতে এতটুকু বেগ পেতে হয়নি তাঁর। বুকে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসেন। ততক্ষণে তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং ভাই রামনিবাসও বাইরে বেরিয়ে আসেন। চোখের সামনে ধর্মবীরকে দেখে সকলেই হাঁ! বেঁচে ছিল এত দিন? কোথায় ছিল? এত দিন পর ফিরল কেন তবে?
আরও পড়ুন: অ্যালিগেটর টেনে নিয়ে গেল শিশুকে
আস্তে আস্তে ধর্মবীর যা বলেন তা অবাক করার মতো। বছরের পর বছর দেহরাদুনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। পুরোন কিছু মনে ছিল না। তার পর একদিন এক মোটরবাইক তাঁকে ধাক্কা মারে। অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান যখন ফিরল তখন তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। মনে পড়তে থাকল পুরোন সব কথা। বাড়ির কথা। সেই মোটরবাইকের মালিকই তাঁকে ৫০০ টাকা দেন। তা দিয়েই রেলের টিকিট কেটে সোজা আলওয়ারে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে ২০০৯ সালে ওই দুর্ঘটনার ঠিক পরে তাঁর কী হয়েছিল, বা কী ভাবে তাঁর দিন কাটত এত দিন, তার সবটা ভাল ভাবে মনে করতে পারছেন না ধর্মবীর।
বাস্তবে এমন ঘটনার নজির অবশ্য নেই বলেই জানাচ্ছেন নিউরোলজিস্টরা। নিউরোলজিস্ট তৃষিত রায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনার পর স্মৃতি ফিরে পাওয়া যায় এমন ঘটনা আগে দেখিনি। তবে আমরা সুস্থ মানুষরাও অনেক সময়ই অনেক কিছু ভুলে যাই, যা পরে হয়ত আচমকাই আমাদের মনে পড়ে যায়। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক সব সময়ই সক্রিয় থাকে। মস্তিষ্কেই একটা বিকল্প পথে ‘হারানো’ স্মৃতিও চলতে থাকে। পরে একই ধরণের কোনও ইঙ্গিত বা ঘটনা আমাদের ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়তে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রেও তা হয়ে থাকতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy