—প্রতীকী চিত্র।
দলিত বলে গঞ্জনা, অপমান তাঁকেও সইতে হয়েছিল।
আর, দশরথ মাজি ও বাপুরাও তাজেঁর মতো সেই অপমান, লাঞ্ছনা সইতে পারেননি কস্তুরীও। দলিত, তাই কেউ জল দিতে চাইত না বলে কস্তুরী পাতকুয়ো খুঁড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম সেই প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজটা কস্তুরীকে একাই করতে হত, দশরথ আর বাপুরাওয়ের মতো। পরে অবশ্য কস্তুরীর পাশে দাঁড়ায় আরও ৪০টি দলিত পরিবার।
উত্তরপ্রদেশের দাধি গ্রামে এক দলিত পরিবারে জন্ম কস্তুরীর। দলিত হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তাঁকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে পাহাড়ি এই এলাকায় বাঁচার অন্যতম সমস্যা ছিল জলের অভাব। সেই গ্রামে একটি মাত্র জলের কল ছিল। কিন্তু সেই জলের কলটি কস্তুরীর মতো দলিতদের জন্য ছিল ব্রাত্য। এক গ্লাস জল পেতে রোজ লড়াই করতে হত। তা-ও রোজ মিলত না। উচ্চ বর্ণের মানুষের আচার-আচরণে দীর্ঘ দিন ধরেই কস্তুরীর মনে ক্ষোভ জমছিল। অপমানিত কস্তুরী ছেলেকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে থাকতে চলে যান কাছেপিঠের একটি জঙ্গলে। সেখানেই ঘর বেঁধে ছিলেন। সেখানে রোজ হয়ত অপমান সহ্য করতে হত না, কিন্তু সেখানেও জলের সমস্যা মেটেনি। জঙ্গলে পাহাড়ের গা চুঁইয়ে চুঁইয়ে যেটুকু জল পড়ত, তা দিয়ে একটা গ্লাস ভর্তি হতেই গোটা দিন কেটে যেত। টানা দু’দিন জল না খেয়ে কাটানোর যন্ত্রণা বেশ ভাল ভাবেই টের পেয়েছিলেন কস্তুরী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে জল দেয়নি ওরা, একাই একটা কুয়ো খুঁড়ে ফেললেন দলিত যুবক
এর পরেই কস্তুরী সিদ্ধান্ত নেন পাতকুয়ো খুঁড়ে ফেলার। আস্ত একটা পাতকুয়ো খুঁড়ে ফেলার পরিশ্রম শরীরে সইবে কি না, তা অবশ্য তাঁর জানা ছিল না। জানুয়ারি মাসে কস্তুরী শুরু করেছিলেন পাতকুয়ো খোঁড়ার কাজ। টানা ৪ মাস কাজ করেছেন কস্তুরী, এক নাগাড়ে। গ্রাম এমনকী, পরিবারের অন্যদের কাছেও হাসির খোরাক হতে হয়েছে তাঁকে। বার বারই তাঁর মনে হয়েছে, এই হাড়খাটুনিটা হয়ত কাজেই লাগবে না। কিন্তু কস্তুরীর সামনে আর কোনও রাস্তাও খোলা ছিল না।
কিন্তু, কস্তুরীর অদম্য জেদ দেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে গ্রামের আরও ৪০টি দলিত পরিবার। কস্তুরীর একা পথ চলা শেষ হয় এপ্রিলে। আরও ৪০টি পরিবার এপ্রিলে হাত মেলায় কস্তুরীর সঙ্গে। জুনেই ২৫ ফুট গভীর পাতকুয়ো খুঁড়ে ফেলেন তাঁরা। কিন্তু তখনও জল মেলেনি। ঠিক হয়, বৃষ্টির জল ধরে রাখা হবে ওই পাতকুয়োয়। শেষমেষ ২৫ ফুট নীচে একটি পাথর সরাতেই জল বেরিয়ে আসে! সেই সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন কস্তুরীও।
বিহারের দলিত দশরথ মাজি লাগাতার ২২ বছর ধরে চেষ্টা করে পাথর কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন। একাই। সম্প্রতি নাগপুরের ওয়াসিম জেলার দলিত বাপুরাও তাজেঁ স্ত্রীর অপমান সইতে না পেরে একাই টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে মাটি খুঁড়ে আট মাসে পাতকুয়ো জলে ভরিয়েছিলেন, একাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy