Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CPM

ত্রিপুরা মডেল বাংলায় নয়, ‘ইন্ডিয়া’ কমিটিতেও থাকছে না সিপিএম

আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে বিরোধী শক্তির একজোট হওয়া যে প্রয়োজন, সেই প্রশ্নে সিপিএমে কোনও দ্বিধা নেই।

cpm.

—প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৫
Share: Save:

বিজেপি-বিরোধিতায় কোনও ‘অভিন্ন’ মডেল সব রাজ্যে কার্যকর করা সম্ভব নয়। ত্রিপুরায় কংগ্রেস সম্পর্কে সে রাজ্যে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনীহা পেরিয়ে যে ভাবে সনিয়া-রাহুল গান্ধীর দলের সঙ্গে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্নে সেই অবস্থানে পৌঁছনো সিপিএমের পক্ষে কঠিন। একই যুক্তি প্রযোজ্য কেরলের ক্ষেত্রেও। ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের পরে উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত এই অবস্থানই নিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। বাংলা ও কেরল, এই দুই রাজ্যে দলীয় নেতৃত্বের ‘বিড়ম্বনা’র কথা মাথায় রেখেই পলিটব্যুরোর আরও সিদ্ধান্ত, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমন্বয় কমিটিতে এখন সিপিএম প্রতিনিধি পাঠাবে না।

আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে বিরোধী শক্তির একজোট হওয়া যে প্রয়োজন, সেই প্রশ্নে সিপিএমে কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু জাতীয় স্তরের ‘বাধ্যবাধকতা’র পাশাপাশিই আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘বাস্তবতা’ও একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হচ্ছে তাদের। যা দলের সামনে উভয় সঙ্কট! এই গোটা পরিস্থিতি নিয়েই দিল্লিতে দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকে আলোচনার পরে ঠিক হয়েছে, গণ-আন্দোলনের আরও বেশি বেশি অংশকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু দেখতে হবে, সাংগঠনিক কোনও কাঠামো যাতে এই পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এই যুক্তিতেই ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির অংশীদার হতে চাইছে না সিপিএম। তবে প্রচার-সহ অন্যান্য বিষয়ের সাব-গ্রুপে তারা আগেই প্রতিনিধি দিয়েছে।

সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর বৈঠকে বঙ্গ সিপিএমের নেতৃত্ব জানিয়েছেন, রাজ্যে নিয়োগ ও অন্যান্য দুর্নীতির মামলায় ‘মাথা’দের ধরার দাবিতে ইডি-সিবিআই দফতর ঘেরাও করে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির সদস্য, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিজেপির প্রতিহিংসা’র কারণে ইডি তলব করছে বলে ওই কমিটির তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। অভিষেকের সঙ্গে একই কমিটিতে সিপিএম থাকলে এমন বিবৃতির অংশীদার তাদেরও হতে হবে, ‘স্ববিরোধিতা’র প্রশ্ন উঠবে। বাংলায় বাম কর্মী-সমর্থক এবং তৃণমূল-বিরোধী জনতার কাছে তাতে ভুল বার্তা যাবে। একই ভাবে কেরলের সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল দক্ষিণের ওই রাজ্যে কট্টর সিপিএম-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তাঁর সঙ্গে সিপিএম এক কমিটিতে থাকবে কী ভাবে? এই যুক্তি আপাতত মেনে নিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলা ও কেরল ব্রিগেডের হাত মেলানো বড় একটা ঘটে না! এ বার পলিটব্যুরোয় অবশ্য ঘটেছে তেমনই। প্রশ্ন উঠছিল, বিজেপিকে হারানোর স্বার্থে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম কি এক বন্ধনীতে আসতে পারে না? আলোচনায় উঠে এসেছে, ত্রিপুরায় বহু দিনের অনীহা-আপত্তি সরিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস পরস্পরের হাত ধরতে পেরেছে। কারণ, শাসক বিজেপির আক্রমণে সে রাজ্যে দু’পক্ষই ভুক্তভোগী। কিন্তু বাংলায় সিপিএম শাসক তৃণমূলের বিরোধী এবং তাদের হাতে ‘আক্রান্ত’। এখানে তৃণমূলের প্রতি সুর নরম করতে গেলে উল্টে বিজেপিকেই বড় সুবিধা করে দেওয়া হবে! বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে রাজ্য বিজেপি নেতারা সেই ফায়দা তোলার চেষ্টাই চালাচ্ছেন। একই ভাবে কেরলে কংগ্রেস ও সিপিএমের সেতুবন্ধন সম্ভব নয়।

ত্রিপুরায় ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিজেপি যে ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছে, সেই প্রসঙ্গও উঠেছিল পলিটব্যুরোয়। ত্রিপুরা রাজ্য সিপিএমের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। কিছু বুথে পোলিং এজেন্ট ছিল, তাঁদের উপরেও হামলা হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। রাজ্য নেতৃত্বের মতে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে গণনা-পর্ব বয়কট করা ছাড়া কর্মীদের ‘রক্ষা’ করার কোনও রাস্তা ছিল না। পলিটব্যুরোও মনে করছে, ত্রিপুরায় বিজেপির হাতে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র জেরে নতুন করে ভোট করানো উচিত ছিল কমিশনের।

জোট ও কমিটির প্রশ্নে পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তে আপাতত কিছুটা স্বস্তি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সূত্রের খবর, মধ্যমগ্রামে রবিবারই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভার পরে প্রশ্নোত্তর-পর্বে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে ঘিরেই। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু বা বিহারের সঙ্গে বাংলা বা কেরলের পরিস্থিতি এক নয়। এটা বুঝেই আমাদের পদক্ষেপ করতে হবে। আগামী ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM opposition alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy