স্মার্ট টিভি দেখিয়ে চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র।
চারটি ক্লাসে চারটি স্মার্ট টিভি। ওয়াইফাই-এ চলছে ইন্টারনেট। তাতে পাঁচ দিনেই উপস্থিতির হার বাড়ল প্রায় ১৮ শতাংশ। শনিবার থেকে মুর্শিদাবাদের সুতির ঘোড়াপাখিয়া প্রাথমিকে ডিজিটাল ক্লাস চালু হতেই এমন প্রতিক্রিয়া মিলেছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। ছাত্রদের ভাষায় ‘সিনেমার মধ্যে পড়া’!
বিদ্যুৎ এসেছে আগেই। কিন্তু ভাগীরথী পাড়ের গ্রামের এই স্কুলে একেবারে ডিজিটাল ক্লাস চালু করে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বই স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং গ্রামবাসীর। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে স্কুল চালানোর জন্য বছরের বরাদ্দ মিলেছিল ৫০ হাজার টাকা। সেখান থেকে স্কুলের অন্য খাতের খরচ বাঁচিয়ে ১৮ হাজার টাকার চারটি টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল। কিন্তু হাতে থাকা বরাদ্দের পরেও আরও টাকা প্রয়োজন ছিল। তা মেটাতে এগিয়ে আসেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরাই। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই নতুন পদ্ধতিতে ক্লাস শুরু করায় উৎসাহ এতটাই বেড়েছে যে, ছাত্রছাত্রীরাই এখন একে অন্যকে তাগাদা দিয়ে দল বেঁধে স্কুলে আসছে। অভিভাবকেরাও কৌতূহল নিয়ে স্কুলে ছুটে আসছেন ‘সিনেমায় পড়া’ জিনিসটা কেমন, তা দেখতে।
১৮২ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য ঘোড়াপাখিয়া প্রাথমিক স্কুলে রয়েছেন ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ক্লাস চলছিল তৃতীয় শ্রেণির। শিক্ষিকা কৃষ্ণা প্রামাণিকের এক হাতে রিমোট, অন্য হাতে মোবাইল। তা জুড়ে দেওয়া হয়েছে টিভির সঙ্গে। ইউটিউব থেকে পর্দায় ভেসে উঠছে মানব শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি। ছবি দেখেই উঠে দাঁড়াল নীপা দাস। হাতের সঙ্গে বাহুকে মিলিয়ে দিয়ে ছোট্ট পড়ুয়া বলে উঠল, “হাত দিয়ে ধরি, খাই, মারি!” হেসে উঠল গোটা ক্লাস। তত ক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে দীপা। ছবি দেখে পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা মিলিয়ে দিয়ে সটান উত্তর, “পা দিয়ে হাঁটি!”
প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস বলেন, “সে দিন এক শিক্ষক আসেননি। শিশু শ্রেণি ফাঁকা। ক্লাসে গিয়ে মোবাইলে ইউটিউবের সঙ্গে জুড়ে দিলাম টিভি। ঠাকুরমার ঝুলি চালিয়ে দিতেই সে কী আনন্দ তাদের! এটাই তো শিক্ষা। আনন্দের সঙ্গে পাঠ। গল্প শুনে শিশু মনের উপরে কী প্রভাব পড়ল, আলোচনার ছলে বেরিয়ে এল সব।”
অভিভাবক চন্দনা দাসের দুই মেয়ে পড়ে এই স্কুলে। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের সময় এলাকায় বিদ্যুৎও ছিল না। যুগ বদলেছে, সেই মতো শিক্ষার পরিবেশও পাল্টে যাচ্ছে।’’
সুতি চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরিন্দম দত্ত বলছেন, ‘‘চক্রে ৭৩টি স্কুল রয়েছে। সব স্কুলকেই এই ভাবে পাঠদান চালু করতে উৎসাহ দেওয়া হবে। এতে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়বে, বাড়বে উপস্থিতিও।”
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলার সহকারী প্রকল্প আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘জেলার বহু প্রাথমিক স্কুল এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানে উদ্যোগী হয়েছে। পর্দায় শিশুদের সিনেমা দেখার আগ্রহ রয়েছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে বই-খাতাহীন ডিজিটাল শিক্ষা নতুন যুগের সূচনা করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy