বাংলার মুকুটে নতুন পালক। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় স্থান পেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন। রবিবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ঘোষণা করল ইউনেস্কো।
শান্তিনিকেতন যে বিশ্ব ঐতিহ্যশালী স্থানের তালিকায় স্থান পেতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। রবিবার তা ঘোষণা করল ইউনেস্কো। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্সে লেখেন, ‘‘আমি খুব আনন্দিত এবং গর্বিত যে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর শান্তিনিকেতন এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্ববাংলার গর্ব, শান্তিনিকেতনকে লালন করেছেন কবি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম একে সমর্থন করে গিয়েছেন বাংলার মানুষ।’’ মমতা এক্সে এও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের সরকার গত ১২ বছর ধরে এর পরিকাঠামো উন্নয়নের করে গিয়েছে। এখন তাকে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো। এর পরেই তিনি কুর্নিশ জানান সেই সব মানুষকে, যাঁরা বাংলাকে ভালবাসেন, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর ভ্রাতৃত্বের বার্তাকে ভালবাসেন। তিনি লেখেন, ‘‘জয় বাংলা, গুরুদেবকে প্রণাম।’’ এক্সে ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির কথা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। তিনি বাংলায় লেখেন, ‘‘একথা জেনে আনন্দিত হলাম যে, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্ন ও ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূর্ত রূপ শান্তিনিকেতন উৎকীর্ণ হয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব পরম্পরা তালিকায়। সব ভারতীয়ের কাছেই এ এক গর্বের মুহূর্ত।’’
ইউনেস্কোর হেরিটেজের তালিকায় যে নাম উঠতে পারে শান্তিনিকেতনের, তা চলতি বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরের দিনই ইঙ্গিত দিয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি এক্সে লিখেছিলেন, ‘‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে সারা দেশের জন্য সুখবর। শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।’’ এই প্রস্তাব দিয়েছিল ইউনেস্কোর উপদেষ্টা সংগঠন ইকোমস। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং দেশের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হয়ে শান্তিনিকেতনের জন্য দাবিপত্রটি সংরক্ষণ স্থপতি আভা নারায়ণ লাম্বা এবং মনীশ চক্রবর্তী মিলে তৈরি করেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেড্ডি জানিয়েছিলেন, বিশ্বভারতী আনুষ্ঠানিক ভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় ঠাঁই পেল কি না, তা সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবের রিয়াধে একটি সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছিলেন রেড্ডি। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বরে সেই ঘোষণা করল ইউনেস্কো।
১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে স্কুল এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীর পথ চলা শুরু। ১৯৫১ সালে এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। তবে গত কয়েক মাসে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগে এই রাজ্যের দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন এবং সুন্দরবন ইউনেস্কোর এই হেরিটেজ তালিকায় উঠে এসেছে। তবে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং টয়ট্রেনের সঙ্গে নীলগিরি পাহাড় ও শিমলার রেলগাড়িও গৌরবের শরিক। আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে দুর্গাপুজোকেও স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ বার শান্তিনিকেতন। ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় তা একক ভাবেই জায়গা করে নিল।