এক বাক্যে দলের সকলেই মেনে নিচ্ছেন, আকস্মিক ভাবে বিদায় নিয়েছেন যিনি, তাঁর বিকল্প খুঁজে পাওয়া অসম্ভব! তবু প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরির জায়গায় পরিবর্ত সাধারণ সম্পাদক বাছতেই হবে সিপিএমকে। রুগ্ণ দলের ভার কার হাতে যাবে, সেই প্রশ্নে সমীকরণ এখন দানা বাঁধছে সিপিএমের অন্দরে।
মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে, রবিবার বেছে নেওয়া হবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কমিটি আবার প্রথাগত ভাবে সাধারণ সম্পাদক বাছবে। তবে তার সলতে পাকানো হয়ে থাকবে আগেই। সিপিএম সূ্ত্রের খবর, দিল্লির পার্টি কেন্দ্রে কর্মরত মারিয়ম আলেকজ়ান্ডার বেবি এবং কৃষক সভার নেতা অশোক ধওয়লের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে পক্ষে-বিপক্ষের মত। বাংলা-সহ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বড় অংশ ধওয়েলেকে নতুন দায়িত্বে দেখতে চায়। দলের শক্তিশালী দক্ষিণী ‘লবি’ আবার বেবির পক্ষে। আপত্তি ও পাল্টা আপত্তির জেরে একান্তই এঁদের মধ্যে কাউকে বাছা না গেলে তখন পলিটব্যুরোর বিদায়ী সদস্যদের মধ্যে এক জনকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে রেখে দিয়ে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হতে পারে।
কোল্লমের ভূমিপুত্র বেবি রাজ্যসভায় সাংসদ ছিলেন আগে। তার পরে কেরলে ফিরে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁর বেবি নামের সঙ্গে মিলিয়ে দলের অনেকে তাঁকে ‘কুট্টি’ সম্বোধনও করেন। তবে রাজনীতিতে তিনি মোটেও ‘শিশু’ নন! ইয়েচুরির ধারে-কাছে না হলেও দিল্লির রাজনীতির অলিন্দে মোটামুটি তাঁর পরিচিতি আছে। বর্তমান পলিটব্যুরোর অনেকেই তাঁকে শীর্ষ পদে চান। তবে সূত্রের খবর, বেবির প্রশ্নে আপত্তি আছে পিনারাই বিজয়নের। একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যাঁর ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে পলিটব্যুরোয় থাকা প্রায় পাকা। বিজয়ন শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেন, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে বেবির ভবিষ্যৎ!

প্যালেস্টাইনের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে প্রস্তাব পেশ করছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবি। মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে। —নিজস্ব চিত্র।
বেবির জন্মদিন আজ, শনিবার আর পরের দিনই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন! দায়িত্ব পেলে ৭১ বছরের বেবি যেমন ওই পদে দু’দফায় থাকতে পারবেন, ধওয়েলের সেই সুযোগ নেই। তাঁর আর এক দফার মেয়াদ বাকি পলিটব্যুরো তথা কেন্দ্রীয় কমিটিতে। মহারাষ্ট্রের চিকিৎসক-নেতা ধওয়েলে ছিলেন ইয়েচুরির প্রিয়পাত্র। তাঁর রাজনীতির ধরন আবার বিজয়নদের সঙ্গে মেলে না। খ্রিস্টান বেবি দায়িত্ব পেলে যেমন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হবেন, তেমনই আবার ধওয়েলে এলে হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের পরে এই প্রথম ওই পদে দক্ষিণী নন, এমন কাউকে দেখা যাবে।
এমতাবস্থায় পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট একেবারে মেপে পা ফেলছেন!পার্টি কংগ্রেসে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশ করানো হয়েছে ধওয়েলেকে দিয়ে। বেবি পেশ করেছেন প্যালেস্তাইনের উপরে হামলার প্রতিবাদে প্রস্তাব। তৃতীয় দিনে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের পর্যালোচনা রিপোর্টের উপরে বিতর্ক শেষে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছেন বি ভি রাঘবুলু। সিপিএমে অনেক সময় মনে করা হয়, সাংগঠনিক রিপোর্ট যিনি পেশ করছেন, তিনিই কাণ্ডারী। কারাট সেই সুযোগ রাখেননি! বরং, তাঁর ঘনিষ্ঠেরা হেসে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কারাট সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন অতীতে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছেন এস আর পিল্লাই। তিনি তো সম্পাদক হননি!
সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শ্রমজীবী, গ্রামীণ প্রান্তিক বা আবাসনবাসী মধ্যবিত্তের আলাদা করে জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করে তাঁদের মধ্যে সক্রিয়তা বাড়াতে হবে সিপিএমকে। রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন রাঘবুলু।
কঠিন সময়ে এই সব গুরু দায়িত্বই নিতে হবে নতুন সাধারণ সম্পাদককে। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘খুব বিশেষ পরিস্থিতি না-হলে এ বার বয়স-নীতিতে ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। বাকিদের মধ্যে থেকেই কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)