Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

মোদী-বালাই, এ বার নয়া দলিত মঞ্চ গড়ছে সিপিএম

উত্তরে মায়াবতী, তো দক্ষিণে করুণানিধি। দলিত স্বার্থে রাজনীতি করে আধিপত্য বিস্তার করেছেন আঞ্চলিক দলের নেতা-নেত্রীরা। অথচ গরিবের জন্য লড়াইয়ের মন্ত্র নিয়েও তিন রাজ্যের বাইরে বিশেষ এগোতে পারেনি সিপিএম। পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত দলিতদের জন্য এ বার নতুন গণ সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত নিল তারা।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

উত্তরে মায়াবতী, তো দক্ষিণে করুণানিধি। দলিত স্বার্থে রাজনীতি করে আধিপত্য বিস্তার করেছেন আঞ্চলিক দলের নেতা-নেত্রীরা। অথচ গরিবের জন্য লড়াইয়ের মন্ত্র নিয়েও তিন রাজ্যের বাইরে বিশেষ এগোতে পারেনি সিপিএম। পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত দলিতদের জন্য এ বার নতুন গণ সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত নিল তারা।

সব কিছু ঠিকমতো চললে আগামী দু’মাসের মধ্যেই ভূমিষ্ঠ হতে চলেছে সিপিএমের এই নয়া গণফ্রন্ট। দলের পলিটব্যুরোর পরিকল্পনা তেমনই। সংগঠনের সম্ভাব্য নাম ঠিক হয়েছে ‘সারা ভারত দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চ’ (এআইডিইএলএম)। রাজ্যে রাজ্যে দলিতদের ছাতার তলায় এনে সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোই হবে এই মঞ্চের লক্ষ্য। পলিটব্যুরোর তরফে এই নতুন উদ্যোগ দেখভালের ভার দেওয়া হয়েছে দলের কৃষক নেতা কে বরদারাজনকে। রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে আপাতত তিনি সলতে পাকানোর কাজ করবেন। তাঁর কথায়, “নভেম্বরে দেশের নানা প্রান্তের দলিত আন্দোলনকারীদের নিয়ে একটা কনভেনশন হবে দিল্লিতে। সেখান থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।”

নিজের রাজ্য তামিলনাড়ুতে দলিতদের সামাজিক অবস্থান এবং তাঁদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের ব্যাপারে বরদারাজন সম্যক অবহিত। তাঁর সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চাইছে সিপিএম। তার পাশাপাশি বাম-শাসিত ত্রিপুরায় তফসিলি উপজাতি সমন্বয় কমিটি গড়ে সাফল্য পেয়েছে তারা। ওই কমিটির দায়িত্বে আছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী অনিল সরকার। তাঁকেও এই উদ্যোগে সামিল করা হচ্ছে। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, সামাজিক শোষণ-পীড়ন এবং জাত-পাতের ভিত্তিতে বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও সংহত করতে চেয়েই এমন উদ্যোগ।

জাত-পাতের রাজনীতির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরেই হিন্দি বলয়ে সিপিএম প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, এই চর্চা দীর্ঘ দিনের। জাতের নামে বজ্জাতি এড়িয়ে চলবেন বলে সিপিএম নেতৃত্বও কখনও এই নিয়ে আলাদা করে মাথা ঘামাননি। কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়া নিয়ে মাতামাতি শুরু করার পরে তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে সিপিএমও অবশ্য ওই সম্প্রদায়ের মন পেতে ঝাঁপিয়েছিল! দলের মধ্যে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মতো নেতারা মুসলিম ও দলিতদের অধিকারের দাবিতে আলাদা করে লড়াই করার জন্য সওয়ালও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলিতদের জন্য আলাদা সংগঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিপিএমও কি তা হলে জাত-পাতের রাজনৈতিক সমীকরণেই আনুষ্ঠানিক ভাবে গা ভাসাল?

সিপিএম নেতৃত্ব এমন ব্যাখ্যাকে ‘অতি-সরলীকরণ’ বলে খারিজ করে দিচ্ছেন। বরদারাজনের বক্তব্য, “যে কোনও ধরনের সামাজিক বৈষম্য, শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা কমিউনিস্টদের কাজ। সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে এই লড়াইয়ের মধ্যে দলিতদের অধিকারের প্রশ্নও পড়ে। এখন এই বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে, কারণ হিন্দুত্বের নামে বিজেপি এই জাত-পাতভিত্তিক বৈষম্যকেই বৈধতা দিতে সক্রিয় হয়েছে!” সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও কেরলে জাত-পাতের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ। তার পরেও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী আন্দোলনে দলের পতাকার বাইরে বাম কর্মী-সমর্থকেরা অংশ নিয়েছেন। নতুন মঞ্চ হলে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা বা উত্তরপ্রদেশে তাদের কাজ করার অনেক সুযোগ আছে বলেই সিপিএমের হিসাব।

সিপিএমের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আরোহণই প্রকাশ কারাটদের নতুন মঞ্চের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে! বিজেপি-র হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রশ্ন তো আছেই। তা ছাড়া, সদ্যই বিহারে নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদব জোট বেঁধে দলিত, কুর্মি, যাদব ভোট এক জায়গায় এনে বিজেপি-র রথের গতি কমিয়ে দিতে পেরেছেন উপনির্বাচনে। জেডিইউ-আরজেডি’র ওই রসায়নই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে সিপিএমকে। দলিতদের অধিকারের দাবিতে লড়াইকে মর্যাদা দিতে পারলে এবং সেই সংক্রান্ত আন্দোলনকে নিজেদের দিকে আনতে পারলে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো যাবে বলে কারাটেরা মনে করছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE