Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

আপাতত নয় জেল, সলমন জামিনেই মুক্ত

শুক্রবারই ‘শুভ’ মুক্তি! এর আগে বহু শুক্রবার বহু সুখবর এনেছে নায়কের জীবনে। কিন্তু এ দিন বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে অন্য এক ‘মুক্তি’ যেন ছাপিয়ে গেল সব কিছুই। বিচারপতি জানিয়ে দিলেন, আপাতত জামিন নিয়ে মুক্ত জীবন যাপন করতে পারবেন নায়ক। ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে যে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে সেই সাজা। নিম্ন আদালতের রায়, যে রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সলমন, তার বিরুদ্ধে আপিল মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। গরমের ছুটির পর আদালত খুললে ১৫ জুন বিচারপতি শুনানির তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।

জামিনের পর বাড়ি ফিরে ভক্তদের নমস্কার সলমনের। ছবি: পিটিআই।

জামিনের পর বাড়ি ফিরে ভক্তদের নমস্কার সলমনের। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

শুক্রবারই ‘শুভ’ মুক্তি!

এর আগে বহু শুক্রবার বহু সুখবর এনেছে নায়কের জীবনে। কিন্তু এ দিন বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে অন্য এক ‘মুক্তি’ যেন ছাপিয়ে গেল সব কিছুই। বিচারপতি জানিয়ে দিলেন, আপাতত জামিন নিয়ে মুক্ত জীবন যাপন করতে পারবেন নায়ক। ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে যে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে সেই সাজা। নিম্ন আদালতের রায়, যে রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সলমন, তার বিরুদ্ধে আপিল মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। গরমের ছুটির পর আদালত খুললে ১৫ জুন বিচারপতি শুনানির তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।

তত দিন? শুক্রবার দুপুরে বিচারপতি অভয় থিপসে ঘোষণা করলেন, সলমনকে এখন সশরীরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ৩০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন নিতে হবে। জমা রাখা হবে তাঁর পাসপোর্টটি। দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে নায়ককে।

খবর আসা মাত্রই ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে মার্সিডিজ এসইউভি–তে বিশ্বস্ত চালক অশোক সিংহকে সঙ্গে নিয়েই নিম্ন আদালতে রওনা হন সলমন। নিয়মকানুন সেরে জামিন নিতে অবশ্য গড়িয়ে যায় বিকেল। মুম্বইয়ের পড়ন্ত আলোয় বাড়ি ফিরে যখন বারান্দা থেকে ভক্তদের হাত নাড়ছেন, সলমন আবার সেই পরিচিত চুলবুল পাণ্ডে। উদ্বেগের কালো মেঘ অনেকটাই সরে গিয়েছে তাঁর মুখ থেকে।

এ দিন হাইকোর্টে যে সলমনকে হাজিরা দিতে হবে না, সে কথা আগের দিনই বলে দিয়েছিলেন বিচারপতি। হিরোর মুক্তির আশা তখন থেকেই দানা বাঁধতে শুরু করেছিল অনুরাগীদের মনে। বুধবার নিম্ন আদালতে রায় বেরনোর পরেই তড়িঘড়ি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন সলমনের আইনজীবীরা। রায়ের কপি হাতে পাননি, এই যুক্তিতে সাড়া দিয়ে তাঁকে তখন দু’দিনের অন্তর্বর্তী জামিন দেয় হাইকোর্ট। আজ সেই মেয়াদ ফুরনোর আগেই নতুন মুক্তি পরোয়ানা এসে যায়। সেই সঙ্গে শুধু সাজার মেয়াদ নয়, নিম্ন আদালতের রায় নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সলমনের আইনজীবীরা। পুরোদস্তুর আপিল মামলার আবেদন জানান তাঁরা। হাইকোর্ট সেই আবেদন গ্রহণও করেছে।

কিন্তু নিম্ন আদালতে যে মামলার নিষ্পত্তি হতে পেরিয়ে গিয়েছে তেরোটা বছর, দশ মিনিটের মধ্যে সেই রায়ের উপরে অন্তর্বর্তী জামিন জোগাড় হওয়াতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন বুধবার। শুক্রবার যে দ্রুততার সঙ্গে নতুন করে জামিন এবং আপিল মামলার আবেদন গ্রাহ্য হয়ে গেল, তাতে সেই বিস্ময় বেড়েছে বই কমেনি। সরকারি আইনজীবীর তরফে মামলা সাজানোতেই গলদ থেকে গিয়েছিল কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। কারণ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ দিন এজলাসে বিবাদী পক্ষের সওয়ালের সামনে কিছুটা নিষ্প্রভই দেখিয়েছে সরকারি কৌঁসুলিদের।

মামলার সওয়ালে রীতিমতো চমক আমদানি করে সলমন খানের আইনজীবী অমিত দেশাই দাবি করেন, দুর্ঘটনা ঘটে গাড়ির চাকা ফেটে যাওয়াতেই। ওই গাড়িতেই ছিলেন গায়ক কামাল খান। সরকারি আইনজীবী তাঁর সাক্ষ্য নেওয়ার চেষ্টাই করেননি। শুধুমাত্র মৃত কনস্টেবল রবীন্দ্র পাটিলের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই তাঁরা সলমনকে দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করে গিয়েছেন।

জবাবে সরকারি আইনজীবী সন্দীপ শিন্দে বলেন, পুলিশ কামাল খানের বয়ান নিয়েছিল। সেই বয়ানে কামাল পরিষ্কার বলেছিলেন, সলমনই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তা হলে কামালকে আদালতে ডাকা হয়নি কেন? কৌঁসুলির দাবি, তিনি লন্ডনে চলে যাওয়ায় তাঁকে কোর্টে হাজির করানো যায়নি। আইনজ্ঞদের অনেকেরই মতে, এই যুক্তি খুব মজবুত নয়। এবং দৃশ্যতই আদালতও এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হয়েই আপিল মামলাটি গ্রহণ করেছে। বিচারপতি বলেছেন, আপিল মামলা গৃহীত হলে সাত বছরের কম মেয়াদের সাজায় জামিন দেওয়াটাই নিয়ম।

আইন বিশেষজ্ঞরাও তাই অনেকেই এ দিন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, উচ্চ আদালতে সলমন খান জামিন পেতেনই। তা শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। তাঁদের মতে, সলমন না হয়ে অন্য যে কেউ হলেও এমন পরিস্থিতিতে একই নির্দেশ আসত।

কসাবের ফাঁসি থেকে সঞ্জয় দত্তের জেল— তাঁর শান দেওয়া যুক্তিতেই বারে বারে ধরাশায়ী হয়েছে অভিযুক্তপক্ষ। এ দিন সেই সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম আক্ষেপ করছিলেন, সলমন মামলায় সরকারি কৌঁসুলির সওয়াল আরও জোরদার হওয়া জরুরি ছিল।

দীর্ঘ মামলা আরও দীর্ঘতর হওয়ায় খুশি নন দেশবাসীর একটা বড় অংশ। ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই মালুম হচ্ছে সেই আঁচ। কেউ লিখেছেন, ‘‘আইনের চোখে সবাই সমান— যদি ভাল আইনজীবী রাখার সামর্থ্য থাকে!’’ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘শহরের দুঁদে আইনজীবী দাঁড় করিয়ে জেলে যেতে যেতেও ফিরে আসেন প্রভাবশালী তারকা। গরিব লরিচালকও একই সুবিধে পাবেন তো?’’

প্রভাবশালীদের হাতে ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চালাতে হয়েছে নীতীশ কাটারার মা নীলমকে। আজকের নির্দেশ শুনে দুঃখ চেপে রাখতে পারেননি তিনি। মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়েও পার পাওয়া যায়— এই বার্তাই সমাজে গেল, মন্তব্য তাঁর। তাঁরই মতো হতাশ মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সত্যপল সিংহও। তাঁর কথায়,‘‘দু’দিন আগে নিম্ন আদালতের রায়ে মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, আইনের ঊর্ধ্বে নন কেউই। আজ মনে হচ্ছে, গরিব মানুষ সত্যিই বিচার পায় না!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE