প্রতীকী ছবি।
কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ রুখতে আর সময় নষ্ট না করে কি ভ্যাকসিনের ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’-এর (যে পরীক্ষায় সুস্থ মানুষের দেহে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্যাথোজেন প্রবেশ করিয়ে তার ফলাফল ও প্রতিষেধকের কার্যকারিতা দেখা হয়) পথে হাঁটা উচিত? না কি প্রথাগত পদ্ধতিই অনুসরণ করা দরকার? কোভিড ১৯ গবেষণা বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে দোলাচলে রয়েছে। বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, গবেষণা এই মুহূর্তে এমন সন্ধিক্ষণে, যেখান থেকে সংক্রমণ রুখতে আগামী দিনের রূপরেখা কী হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব। সেখানেই চলে আসছে ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’-এর প্রসঙ্গ।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড জন রবার্টস এ বিষয়ে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘প্রথাগত পদ্ধতিতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখার মতো সময় আমাদের হাতে কি রয়েছে? এখন জরুরি পরিস্থিতি। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, মানুষের রক্তরস বা কনভালেসেন্ট প্লাজ়মায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ‘রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন’-এর বিরুদ্ধে শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলিই মূলত সংক্রমিত হওয়ার পরে বৃহত্তর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। সে কারণে একে ‘ত্রাতা অ্যান্টিবডি’ও বলে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, এক বার বা চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে স্পাইক প্রোটিন বিরোধী অ্যান্টিবডি এবং টি-লিম্ফোসাইট কোষ তৈরি হচ্ছে। এই অ্যান্টিবডি কনভালেসেন্ট প্লাজ়মার ত্রাতা অ্যান্টিবডির মতোই। গত দু’মাসে কয়েক হাজার মানুষ তৃতীয় দফার পরীক্ষায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি এই ভ্যাকসিন পেয়েছেন। তাঁরা কেউই সামান্য ব্যথা বা হাল্কা জ্বর ভাব ছাড়া অন্য কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন সে ভাবে হননি। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়ায় তা এখনও বাজারে আসেনি।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের এক আলোচনাসভায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর তথা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষক দলের প্রধান অ্যাড্রিয়ন হিল-ও জানিয়েছেন জরুরি পরিস্থিতিতে তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণার দিকে তাকিয়ে থাকলে সময় নষ্ট হয়। সেই কারণেই তিনি এবং আধুনিক ভ্যাকসিন গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ স্ট্যানলি প্লটকিন দ্রুত কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্যে ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’-এর পক্ষে সওয়াল করেছেন। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব, তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্যে মাসের পর মাস অপেক্ষা না করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘ওপেন লেবেল ট্রায়াল’ শুরু করতে পারে। যেখানে ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার্স’ অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশকর্মীদের মধ্যে যাঁরা ইচ্ছুক, তাঁদের ভ্যাকসিনের ডোজ় দিয়ে কার্যকারিতা দেখা যেতে পারে। কারণ, দেশীয় সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ় তৈরি করে বসে আছে। তাই ‘এপিডেমিক কার্ভ’ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন তাদের কাছ থেকে ডোজ় কিনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংক্রমণপ্রবণ জনগোষ্ঠীকে এই ভ্যাকসিন দিতে পারে। এর পরে ওই জনগোষ্ঠীকে কয়েক মাস পর্যবেক্ষণে রেখে কত জন সংক্রমিত হচ্ছেন তা দেখা দরকার। সায়ন্তনবাবুর কথায়, ‘‘কারণ, যত দিনে কেন্দ্রীয় সরকার লালফিতের ফাঁস কাটিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, তত দিনে পশ্চিমবঙ্গের মতো ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যের অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু রাজ্য সরকার এই পদক্ষেপ করলে সবার জন্য ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগেই রাজ্যের সংক্রমণপ্রবণ জনগোষ্ঠী তা পেয়ে যেতে পারে।’’
যদিও বিজ্ঞানীদের অন্য অংশ মনে করছেন প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োয় বড় ক্ষতি হতে পারে। ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে এমন ওষুধ নেই যা দিয়ে ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আটকাতে পারি। ফলে যে কোনও পদক্ষেপই ভীষণ সাবধানে করা দরকার।’’ অন্য এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন কাজ করল না, সেটা একটা দিক। কিন্তু ভ্যাকসিনের কারণে শরীরের কোনও ক্ষতি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত হওয়া দরকার। ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার আগে আরও গবেষণা, আলোচনার প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy