করোনা সঙ্কটে মৃত্যু অব্যাহত গুজরাতে। —ফাইল চিত্র।
শ্মশানের বাইরে দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে সারি সারি অ্যাম্বুল্যান্স। শনিবার গুজরাতে এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। জানা গিয়েছিল, প্রতি দিন এত সংখ্যক করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে যে, দাহ করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে শ্মশানে মুসলিম কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তুলল গুজরাত বিজেপি-র ভডোদরা শাখা। স্থানীয় খাসওয়াড়ি শ্মশানে দেহ দাহ করার সময় কোনও মুসলিম শ্মশানকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকরা হাজির থাকতে পারবেন না বলে দাবি তুলেছে তারা।
গত ১৬ এপ্রিল দলের এক নেতার শেষকৃত্যে যোগ দিতে খাসওয়াড়ি শ্মশানে গিয়েছিলেন বিজেপি কর্মী ও সমর্থকেরা। গিয়েছিলেন ভডোদরা বিজেপি-র সভাপতি বিজয় শাহও। কিন্তু সেখানে এক মুসলিম স্বেচ্ছাসেবককে চিতার কাঠ সাজাতে দেখে চটে যান তিনি। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজেপি কর্মীরাও। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হন বিজয়। ওই শ্মশানে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে ভডোদরা পুরসভার কাছে আর্জি জানান তিনি। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘কাঠ ও ঘুঁটে সরবরাহ করেন ওই যুবক। শ্মশানে অনেক মুসলিম কর্মীকে কাজও পাইয়ে দিয়েছেন তিনি, যা অত্যন্ত অন্যায়। স্বেচ্ছাসেবী হওয়া ভাল। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অনধিকার প্রবেশ একেবারেই কাম্য নয়।’’
ওই মুসলিম যুবকের কাঠ সরবরাহে আপত্তি না তুললেও, শ্মশানের বাইরে কাঠ রেখেই যাতে তিনি চলে যান, ভিতরে যাতে কোনও পরিস্থিতিতেই পা না-রাখেন, তার ব্যবস্থা করতে পুরসভাকে আর্জি জানান বিজয়। তবে ভডোদরা পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশ বিজয়ের ওই আর্জির বিরোধিতা করেছেন। মেয়র কেয়ুর রোকাড়িয়া বলেন, ‘‘অতিমারির সময় সব সম্প্রদায়ের মিলেমিশে কাজ করা উচিত।’’ একান্তে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। রবিবার বিধায়ক যোগেশ পটেল এবং এক পুলিশ আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেয়ুর। অতিমারিতে পাশে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। শ্মশানে ঢোকার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই বলেও সকলকে জানিয়ে দেন মেয়র।
খাসওয়াড়ি শ্মশানের এক কর্মী বলেন, ‘‘১৬ তারিখ ছিল শুক্রবার। এমনিতেই রমজান চলছে। মাথায় টুপি পরে ছিলেন ওই স্বেচ্ছাসেবক। তাতেই বিপত্তি ঘটে।’’ ওই শ্মশানকর্মী জানান, গত এক বছরে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের সহায়তাতে কমপক্ষে ১ হাজার দেহ দাহ করা হয়েছে। তা নিয়ে স্থানীয়দের কেউও এত দিন আপত্তি তোলেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক বিজেপি কাউন্সিলর বলেন, ‘‘গত এক বছরে ভডোদরার মুসলিম সম্প্রদায় যে ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে ধর্মকে টেনে আনা উচিত নয়।’’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গুজরাত। রবিবার সেখানে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১০ হাজার ৩৪০ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১০ জন করোনা রোগীর। এমন পরিস্থিতিতে সৎকারের ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা পালন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই নিভৃতবাসে থাকার দরুণ মৃত ব্যক্তির পরিবার এবং আত্মীয়েরা সৎকারে অংশ নিতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের একটা বড় অংশ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy