Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
উত্তরাখণ্ড

বন্যায় ভুখা লাখো মানুষ, দেদার ভোজ ত্রাণকর্তাদের

জলের তোড়ে নিমেষে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মাথা গোঁজার আশ্রয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁকড়ে ধরা হাত ছাড়িয়ে ভেসে গিয়েছিলেন প্রিয়জন। ২০১৩-র ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যায় যখন সব হারিয়ে বিপন্ন উত্তরাখণ্ডের লাখো মানুষ, ত্রাণ পরিদর্শনের নামে সে সময় সরকারি টাকা নয়ছয় করেছিলেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের অফিসারেরা। তথ্য জানার অধিকার আইনে কালই সামনে এসেছে এই আর্থিক খতিয়ান।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

জলের তোড়ে নিমেষে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মাথা গোঁজার আশ্রয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁকড়ে ধরা হাত ছাড়িয়ে ভেসে গিয়েছিলেন প্রিয়জন। ২০১৩-র ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যায় যখন সব হারিয়ে বিপন্ন উত্তরাখণ্ডের লাখো মানুষ, ত্রাণ পরিদর্শনের নামে সে সময় সরকারি টাকা নয়ছয় করেছিলেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের অফিসারেরা। তথ্য জানার অধিকার আইনে কালই সামনে এসেছে এই আর্থিক খতিয়ান। আজ বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত এই কেলেঙ্কারিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন।

দু’বছর আগে উত্তরাখণ্ডের বন্যায় মারা যান প্রায় তিন হাজার মানুষ। আজও খোঁজ মেলেনি আরও কত শত লোকের। এই বিপর্যয়ের সময় ত্রাণের কাজে যাওয়া সরকারি অফিসারেরা যে খরচের হিসেব দিয়েছিলেন, তা সবিস্তার জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে মামলা করেন ন্যাশনাল অ্যাকশন ফোরাম ফর সোশ্যাল জাস্টিস সংস্থার ভূপেন্দ্র কুমার। আর তাতেই সামনে এসেছে যথেচ্চ টাকা খরচের হিসেব-নিকেশ।

রাজ্য সরকারি অফিসারদের জমা দেওয়া বিলে দেখা যাচ্ছে, আধ লিটার দুধ কিনতে কাউকে গুনতে হয়েছে ১৯৪ টাকা! কখনও তিন দিন ধরে একই দোকান থেকে কেনা হয়েছে গড়ে ১৮০০টা করে বর্ষাতি। গরমিলের নজির আছে আরও ভূরি ভূরি।

উদ্ধারকাজ পরিদর্শনে গিয়ে যে হোটেলে অফিসারেরা উঠেছিলেন, খাওয়া খরচ বাদে তার প্রত্যেক দিনের ভাড়া ৭০০০ টাকা। দিনের পর দিন না খেয়ে, ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি করে যখন দিন কাটাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ, তখনও অফিসারদের চপ-কাটলেট-দুধ-মাংস-চিজে ঘাটতি পড়েনি। আড়াইশো টাকা প্রাতরাশ দিয়ে জলযোগ শুরু হতো। দিনে আর রাতের খাওয়া খরচা বাবদ যেত কমকরে আরও তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকা।

এর বাইরে বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখতে গিয়ে কেউ কেউ তেলের হিসেব যা দিয়েছেন, তাতে দুর্নীতির চেহারাটা প্রকট হয়েছে আরও। এক হেলিকপ্টার সংস্থাকে অফিসারদের নিয়ে ৪ দিন ঘোরাঘুরির জন্য তেলের খরচ বাবদই দেওয়া হয়েছে ৯৮ লক্ষ টাকা। স্কুটি, মোটরবাইকের জন্যও দেওয়া হয়েছে ৩০ লিটার ডিজেলের দাম। বিরোধীদের অভিযোগ, ছোট গাড়িতে তেলের ট্যাঙ্ক আদৌ অত বড় হয় না জেনেও বিল অনুযায়ী টাকা মেটাতে দেরি হয়নি।

তথ্য জানার অধিকার আইনে মামলা করেন যিনি— সেই ভূপেন্দ্র কুমারের দাবি, সরকারি টাকা নয়ছয়ের হিসেব-নিকেশই শুধু নয়, বিপর্যয়ের আগে কোনও হোটেল ভাড়ার বিলও এর মধ্যে গুঁজে দিয়েছেন অনেকে।

কংগ্রেস শাসিত উত্তরাখণ্ডে এই দুর্নীতির কথা জানাজানি হতেই সরকারের সমালোচনায় নেমেছে বিজেপি। তাদের দাবি, জনগণের করের টাকায় দুর্যোগের মধ্যেও যে অফিসারেরা এমন মোচ্ছব করেছেন, তাঁদের থেকে জবাব চাক প্রশাসন। ক’দিন আগে কেদারনাথে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তাঁকেও ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, ‘‘ওখানে গিয়ে তো এ সব চোখে পড়েনি রাহুলের। শুধু পাহাড়ি পথে সওয়ার হলেই হবে না, এ বার দুর্নীতি বন্ধেও কিছু শক্তি ক্ষয় করুন তিনি।’’

টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে হিসেব জমা দেওয়ার কথা জানতে পেরে কাল রাজ্যকে সিবিআই তদন্তের পরামর্শ দিয়েছিলেন তথ্য কমিশনার অনিল শর্মা। তাঁর সুপারিশ ও দিনভর বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ে শেষমেশ আজ নড়েচ়ড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ না দিলেও মুখ্যসচিবকে আজ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE