প্রতীকী ছবি
নিরানব্বই সালের মার্চের এক সন্ধ্যা। দিল্লির চাণক্যপুরী এলাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর উদ্যোগে একটি চা-চক্রের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। চেন্নাই থেকে উড়ে এসেছেন জয়ললিতা। বাজপেয়ী সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেন কি না, সেই জল্পনা তুঙ্গে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এলেন সনিয়া গাঁধী। সনিয়া-জয়া-স্বামীর একান্ত আলোচনা ভিত নাড়িয়ে দিল বাজপেয়ী সরকারের।
কেটে গিয়েছে পাঁচটা বছর। ২০০৪-এর লোকসভা ভোট। কোথায় সেই সুখস্মৃতি! জয়া বললেন— সনিয়া বিদেশিনি! উনি কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন? তখন বিজেপির সঙ্গে পথ চলা শুরু হয়েছে তাঁর।
দর কষাকষিতে না-পোষালে মুহূর্তে রাস্তা বদলে ফেলার অঙ্ক কষেন যে রাজনীতিক, তাঁকে নিয়ে সব সময়েই উদ্বেগে থাকে দিল্লির শাসকরা। আর তাই নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুর দিকে বন্ধু হিসেবে এডিএমকে পাশে থাকলেও এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হচ্ছে সনিয়া-রাহুলের। আম্মার অনুপস্থিতিতেও এগোচ্ছে তাঁর দলকে নিয়ে নতুন সমীকরণ গড়ার চেষ্টা।
জয়ললিতা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তাঁর দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে গিয়েছে ১০ জনপথ। নোট বাতিল প্রশ্নে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। এদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে চাইছেন রাহুল। কংগ্রেসের ডাকে সংসদ ভবনে গাঁধী মূর্তির সামনে বিরোধীদের ধর্না কর্মসূচিতেও হাজির হয়েছেন এডিএমকে সাংসদরা। জয়ার মৃত্যুর পরে সেই সম্পর্ককে আরও মাখো মাখো করতে চান রাহুল। নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুকুল ওয়াসনিক ও গুলাম নবি আজাদকে নিয়ে আজই চেন্নাই পৌঁছন তিনি।
জয়ার হৃদ্রোগের পরেই নেত্রীর জন্য টুইটারে প্রার্থনা করেছিলেন রাহুল। আর আজ জয়ললিতাকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মহিলা, কৃষক, মৎস্যজীবী বা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ তাঁর চোখ দিয়েই স্বপ্ন দেখতো!’’ সনিয়াও বলেছেন, ‘‘উনি জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। কিন্তু মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কখনও সরে আসেননি।’’ কংগ্রেস সূত্রের মতে— এডিএমকে যে মোদী সরকারের সব পদক্ষেপ সমর্থন করে না, তা জিএসটি নিয়ে তাদের বিরোধিতাতেই স্পষ্ট। নোট বাতিলে মানুষের ভোগান্তি নিয়েও মুখ খুলেছে তারা। ফলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করার যে কাজ চলেছে, তাতে জয়ললিতার দল থাকতেই পারে।
কিন্তু এডিএমকে তো শুধু নয়, সংসদের ধর্নায় সামিল হয়েছিল করুণানিধির দল ডিএমকে-ও। তা হলে তামিলনাড়ুর যুযুধান দুই শিবিরকে কী ভাবে এক সঙ্গে রাখা যাবে? কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘উত্তরপ্রদেশ হলে মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহকে কখনওই এক সঙ্গে রাখা যেত না। তামিলনাড়ুতে এটা হয়। করুণা ও জয়া, দু’জনেই যেমন একসঙ্গে মনমোহন সিংহ সরকারকে সমর্থন করেছিলেন।’’ কংগ্রেসের দাবি— পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দিল্লির মোদী-বিরোধী রাজনীতিতেই থাকতে চাইছে জয়ার দল।
মোদী শিবিরের ভয় এখানেই। লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদ ছেড়ে দিয়ে এডিএমকের সঙ্গে বন্ধুত্বের যে যাত্রা শুরু, পরপর কয়েকটা বিষয়ে সেই সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে যে ভাবে আঞ্চলিক দলগুলি এখন একজোট হচ্ছে, তাতে কোথাকার জল কোথায় গড়াবে, তা নিয়ে চিন্তায় বিজেপি। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আম্মার দলই ভেঙে যায় কি না, সে দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে শাসক জোটকে।
তবে জয়ার দলকে পাশে রাখতে মোদী শিবিরও কম চেষ্টা করছে না। অসুস্থ জয়ললিতা কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন, সে প্রশ্ন তুলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছিলেন বিজেপির নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কিন্তু তাতে কান দেননি মোদী। বরং অমিত শাহকে তিনি পাঠিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের হাসপাতালে। রাজ্য সরকারকে সব রকম ভাবে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এর পরেও কি সব কিছু ঠিক ভাবে এগোবে? চিন্তায় দিল্লির শাসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy