সজ্জন কুমার।
শিখ-বিরোধী দাঙ্গার মামলায় কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। এই প্রথম ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার মামলায় শাস্তি হল কোনও উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস নেতার। সেইসঙ্গে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর মোকাবিলায় নয়া আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন বিচারপতিরা।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গাঁধীকে খুন করে তাঁর শিখ দেহরক্ষীরা। তার পরেই দেশ জুড়ে শিখ সম্প্রদায়ের উপরে হামলা শুরু হয়। সজ্জন কুমার, জগদীশ টাইটলার-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতা সেই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির রাজনগর এলাকায় একটি শিখ পরিবারের পাঁচ জন সদস্যকে খুন করা ও একটি গুরুদ্বারে অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে।
এই মামলায় প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর বলবান খোকর, প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার ক্যাপ্টেন ভাগমল-সহ পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে দায়রা আদালত। কিন্তু সজ্জন কুমার মুক্তি পান। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানায় সিবিআই। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই এই রায় দিয়েছে বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি বিনোদ গয়ালের বেঞ্চ। বাকি পাঁচ অভিযুক্তের শাস্তি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। বছর তিয়াত্তরের সজ্জনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তাঁর আইনজীবী অনিল শর্মা জানিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর চেষ্টা করবেন তাঁরা। তা সম্ভব না হলে সজ্জন আত্মসমর্পণ করবেন।
আরও পড়ুন: ‘বিচার পেলাম, কিন্তু অনেক দেরিতে’
রাজনগরের ওই ঘটনায় জগদীশ কৌরের ছেলেকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল হামলাকারীরা। নীরপ্রীত কৌরের বাবাকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে একই কায়দায় খুন করা হয়। আজ আদালতে হাজির ছিলেন তাঁরা। রায়ের পরে কেঁদে ফেলেন দু’জনেই। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘যাঁরা দাঙ্গার শিকার তাঁদের বোঝানো প্রয়োজন যে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে লক্ষ লক্ষ শিখ, মুসলিম, হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩৭ বছর পরে ফের ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল দেশে। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে দিল্লিতে ২৭৩৩ জন শিখকে খুন করা হয়। দেশের অন্যান্য অংশেও কয়েক হাজার শিখ খুন হয়েছিলেন। দেশ এখনও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হতে পারেনি।’’ বিচারপতিদের মতে, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত এটাই গণহত্যার প্রথম বা শেষ ঘটনা নয়। ১৯৯৩ সালে মুম্বই, ২০০২ সালে গুজরাত, ২০০৮ সালে ওড়িশা, ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশে গণহত্যার সঙ্গে এই ঘটনার মিল পাওয়া যায়।’’ বিচারপতিদের মতে, এই ঘটনাগুলিতে প্রভাবশালী রাজনীতিকেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা চালিয়েছে। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের অপরাধীদের পিছনে রাজনৈতিক মদত থাকে। তাই তারা দশকের পর দশক শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে। বিচারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তা ছাড়া দেশের ফৌজদারি আইনে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত কোনও ধারা নেই। এই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy