Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
Haryana Assembly Election 2024

হরিয়ানার ময়না তদন্তে অস্বস্তির মুখে কংগ্রেস

হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের উপর বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রবল ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে লাগাতে পারেনি কংগ্রেস।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৩৭
Share: Save:

গত কাল হরিয়ানায় কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পর আজ মুখ খুললেন রাহুল গান্ধী। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে জানালেন, “হরিয়ানায় অপ্রত্যাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখছি আমরা। বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে যে অভিযোগ পেয়েছি, তা নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। হরিয়ানার মানুষকে ধন্যবাদ তাঁদের সমর্থনের জন্য। ধন্যবাদ আমাদের কর্মীদের, যাঁরা নিরলস পরিশ্রম করেছেন। অধিকারের জন্য, সত্যের জন্য লড়াই জারি থাকবে।”

হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের উপর বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রবল ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে লাগাতে পারেনি কংগ্রেস। কেন পারেনি, সেই ‘পর্যালোচনার’ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্ব হরিয়ানার জাঠ নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার উপরে একটু বেশিই ভরসা রেখেছিল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্য নেতারা প্রচার থেকে অনেকটাই হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন। এই সুযোগে অ-জাঠ ভোট নিজেদের ঝুলিতে টানতে মরিয়া প্রচার চালায় বিজেপি, যার সুফল তারা ভোটবাক্সে পেয়েছে।

জাঠ এবং অ-জাঠের মেরুকরণের পাশাপাশি কংগ্রেসের ময়নাতদন্তে উঠে আসছে প্রচারের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব এবং গাফিলতির প্রসঙ্গও। ঘরোয়া ভাবে একাধিক প্রার্থী বলছেন, তাঁদের কেন্দ্রে প্রচারের জন্য রাজ্য স্তরের বড় নেতাদের ধারাবাহিক উপস্থিতি ছিল না। প্রথমে স্থির হয়েছিল, প্রতিটি গ্রামের মহিলাদের বলা হবে মানুষের কাছে গিয়ে দলের ইস্তাহারে দেওয়া সাতটি গ্যারান্টির কথা বোঝাতে। এই একই সূত্রে ফল পাওয়া গিয়েছিল কর্নাটক এবং তেলঙ্গনায়। কিন্তু হরিয়ানায় সে ভাবে কোনও উদ্যোগ হয়নি। এমনকি প্রতি মাসে একজন মহিলাকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া বা ২ লাখ যুবাকে সরকারি চাকরি দেওয়ার মতো জনমোহিনী গ্যারান্টিগুলিও ঘরে ঘরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন কংগ্রেস নেতারা।

এক কর্তার কথায়, লোকসভা ভোটের আগে আপ অল্পবয়সি পুরুষ এবং মহিলাদের ভাড়া করে নিযুক্ত করেছিল গ্রামে গ্রামে গিয়ে খয়রাতির গ্যারান্টি ভাল করে বোঝানোর জন্য। কিন্তু কংগ্রেস জয়ের প্রশ্নে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, সেই পরিশ্রমটাই করার প্রয়োজন অনুভব করেননি নেতারা। কংগ্রেসের প্রচারের মুখ ছিল একটাই— দশ বছরের বিজেপি ‘অপশাসনকে’ সরিয়ে হুডাকে মুখ্যমন্ত্রী করা। অর্থাৎ রেলের ইঞ্জিনের প্রতি অধিক যত্নবান হতে গিয়ে কামরাগুলি যে ছত্রভঙ্গ হচ্ছে, সেই খেয়াল রাখেননি কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

তিনটি বিষয় উঠে আসছে পরাজয়ের বিশ্লেষণে। প্রথমত এবং প্রধানত, হুডা পরিবারের উপরে অতিনির্ভরতা। দুই, প্রচারের ক্ষেত্রে গাফিলতি এবং তিন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সামাল না দিতে পারা। দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ে পরাজয়ের পরেও উপযুক্ত শিক্ষা নেয়নি কংগ্রেস।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, হরিয়ানা বিপর্যয়ের প্রভাব কংগ্রেসে কী ভাবে পড়তে পারে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের পুনরুত্থানের যে ভাষ্য দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছিল, তাতে এই হার নিঃসন্দেহে চোনা ফেলল বলে মনে করা হচ্ছে। গোটা রাজ্য জুড়ে প্রচার করেছিলেন রাহুল গান্ধী, নরেন্দ্র মোদীর থেকে অনেকটাই বেশি। ফলে এই ব্যর্থতার দায়ভার তিনি ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না। সময়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সামনেই মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন। হরিয়ানায় কংগ্রেস সরকার গড়বে ধরে নিয়ে পুরো কৃতিত্বই রাহুলকে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের ভাবমূর্তি সে ক্ষেত্রে এমন জায়গায় পৌঁছত, যা মোদী-শাহের জন্য চূড়ান্ত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত। বাস্তবে হল তার উল্টো। কোন পথে এই আহত ভাবমূর্তি মেরামত করা যাবে, আপাতত সেটাই চিন্তায় রাখবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE