Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

স্বজন হারিয়ে শত্রু নিরসার দুই নেতা

কয়লার মাফিয়া-রাজের সঙ্গে রাজনীতির এক কোণের ‘অন্ধকার দুনিয়ার’ যোগসাজসে কয়েক বছরের ব্যবধানে খুন হয়েছিলেন দু’টি পরিবারের রাজনেতা। জনতার অনুরোধে রাজনীতির গলিতে নামেন নিহত মার্কসিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এমসিসি) নেতা গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে অরূপ। তার পর ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা সুশান্ত সেনগুপ্তের স্ত্রী অপর্ণাদেবীও।

অপর্ণা সেনগুপ্ত ও অরূপ চট্টোপাধ্যায়

অপর্ণা সেনগুপ্ত ও অরূপ চট্টোপাধ্যায়

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

কয়লার মাফিয়া-রাজের সঙ্গে রাজনীতির এক কোণের ‘অন্ধকার দুনিয়ার’ যোগসাজসে কয়েক বছরের ব্যবধানে খুন হয়েছিলেন দু’টি পরিবারের রাজনেতা। জনতার অনুরোধে রাজনীতির গলিতে নামেন নিহত মার্কসিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এমসিসি) নেতা গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে অরূপ। তার পর ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা সুশান্ত সেনগুপ্তের স্ত্রী অপর্ণাদেবীও।

স্থানীয়রা জানান, সহানুভূতির ভোটে জিতে জনপ্রতিনিধি হন দু’জনই। কিন্তু, বামপন্থী দু’টি দলের দুই নেতার মধ্যে কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ। স্বজনের উপর আততায়ী হামলার জন্য তাঁরা আঙুল তোলেন একে অপরের দিকেই।

ধানবাদের নিরসা কেন্দ্রে বছরের পর বছর ধরে ওই দু’টি পরিবারের ভোটের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন এলাকার নাগরিকরা। আগামী ১৪ ডিসেম্বর যেমন বিধানসভার নির্বাচনে সম্মুখ-সমরে নামবেন অরূপবাবু, অপর্ণাদেবী। এলাকার লোকজনের বক্তব্য, নিরসায় সমান্তরাল প্রশাসন চলে কয়লা মাফিয়াদেরও। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ চান, শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে খনিগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে। এ সবের দ্বন্দ্বে নিরসায় রাজনৈতিক খুনোখুনি ঘটে মাঝেমধ্যেই। ২০০০ সালে তার শিকার হন সেখানকার চার বারের বিধায়ক গুরুদাসবাবু। ওই বছরই পৃথক রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল ঝাড়খণ্ড। বাবার মৃত্যুর পর ভোটের ময়দানে নেমে জেতেন অরূপবাবু। দু’বছর পর আততায়ী হামলায় প্রাণ হারান স্থানীয় ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা সুশান্তবাবু। ভোটে লড়তে নামেন অপর্ণাদেবী। জিতে মন্ত্রীও হন।

এলাকায় ঘুরলে শোনা যায়, দু’টি খুনের ঘটনায় নাকি জড়িত ছিলেন এমসিসি, ফরোয়ার্ড ব্লকের কয়েক জন নেতাই। কিন্তু পুলিশি তদন্তে কারও বিরুদ্ধে জোরাল প্রমাণ মেলেনি।

চট্টোপাধ্যায় ও সেনগুপ্ত পরিবারের কেউ কিন্তু তা মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, একে অপরের বিরুদ্ধেই। বিধায়ক ইরূপবাবুর কথায়, “ইতিহাস কখনও ভুলতে পারব না। দু’টি দল কখনও এখানে এক হতে পারবে না।” রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অপর্ণাদেবীর কথায়, “মানুষের জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমার স্বামীর খুনিরা যে দিন শাস্তি পাবে, সে দিন আমিও শান্তি পাব।”

দেশজুড়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘বিজয়রথ’ ঠেকাতে হাত ধরছে অবিজেপি দলগুলি। এমন পরিস্থিতিতে নিরসার ছবিটা একেবারেই অন্যরকম। বামপন্তী দু’টি দল সেখানে লড়ছে নিজেদের মধ্যেই। এক ইঞ্চি জমি কেউ ছাড়তে নারাজ। এলাকায় বিজেপির দাপট যে বাড়ছে, তা অবশ্য স্বীকার করছেন দুই নেতাই। বাঙালি দু’টি রাজনৈতিক পরিবারের বিরোধ নিয়ে ধন্দে এলাকার ভোটাররাও। সব দিক দেখে এ বার নিরসায় এক বাঙালিকেই প্রার্থী করেছে জেএমএম। দলের নেতারা বলছেন, ভোটে জিতবেন তাঁদের প্রার্থী অশোক মণ্ডলই। বাঙালি ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের প্রার্থী গণেশ মিশ্র সহজেই জয়লাভ করবেন বলে আশায় রয়েছে বিজেপি।

স্কুলজীবনে পুরুলিয়ায় থাকতেন গণেশবাবু। বাংলায় বললেন, “মোদীর কাজ পছন্দ বাঙালিদেরও। ভোট তাই পাবই। আর নিরসায় বাঙালি ভোট ভাগ হবে তিন দলের মধ্যে। তাতে এগিয়ে থাকবে বিজেপিই।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE