আম-জনতার দাবি মেনে ও রাজভবনের শতাধিক কর্মীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রের ধাক্কায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনই ইস্তফা দিতে হয়েছে মেঘালয়ের রাজ্যপালকে। এ বার রাজভবনকে বিতর্কমুক্ত করতে বিদায়ী রাজ্যপাল ভি সন্মুগনাথনের ব্যক্তিগত সচিব ও জনসংযোগ আধিকারিকদেরও সরিয়ে দিল মেঘালয় সরকার। গোটা ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আঙুল উঠেছিল সন্মুগনাথনের যে মহিলা ব্যক্তিগত সহকারীর দিকে, অপসারিত তিনিও।
রাজ্যপালের ইস্তফার পরে এই অপসারণকে এক দিক থেকে জয় হিসেবেই দেখছেন মেঘালয়ের নারী সুরক্ষা অধিকার কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, যে সব কর্মী ও আমলার মদতে এত দিন ধরে রাজভবনকে ‘লীলাক্ষেত্র’ বানিয়ে রাখা হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার ছিল। তড়িঘড়ি সকলকে সরিয়ে তদন্তের সম্ভাবনা ধামাচাপা দেওয়া হল। অবশ্য যে মহিলার অভিযোগে শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালকে ইস্তফা দিতে হল, তিনি এখনও লিখিত অভিযোগ করেননি। মুখ খুলেছেন শুধুই সংবাদমাধ্যমে। তাই রাজ্য বিজেপি ভাবমূর্তি ফেরাতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে।
প্রবীণ আরএসএস কর্মী ভি সন্মুগনাথনের কাজকর্মে একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থা আরএসএসের। কারণ তাঁরাই বার বার নীতি-পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। সামনে পাঁচ রাজ্যের ভোট। এই অবস্থায় কংগ্রেসের হাতে এমন অস্ত্র তুলে দেওয়া মানতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্ব। তাই তদন্তের অপেক্ষা না করেই জরুরি ভিত্তিতে সন্মুগনাথনকে ইস্তফা দিয়ে দিল্লি তলব করা হয়। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে জর্জরিত সন্মুগনাথন অবশ্য দিল্লি যাওয়ার আগে নীলাচল পাহাড়ে গিয়ে মা কামাখ্যার আশীর্বাদ নিয়েছেন।
মেঘালয়ের রাজ্য বিজেপি সভাপতি সিবুন লিংডোর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে তা নিন্দনীয়। তবে তা অরাজনৈতিক পদে থাকা সন্মুগনাথনের ব্যক্তিগত কাণ্ড। এর সঙ্গে দল বা আরএসএস আদর্শের যোগ থাকতে পারে না।’’ তিনি বলেন, “মেঘালয়ের রাজভবনে যা হয়েছে—তা রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সন্মুগনাথন অবিলম্বে পদত্যাগ করেছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, শ্লীলতাহানির ঘটনার অভিযোগকারী মহিলাও এফআইআর করেননি। এ ক্ষেত্রে রাজভবন কর্মীরা যে স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্র রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই পুলিশ বা রাজ্য সরকার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতে পারে। প্রকৃত তথ্যগুলি সামনে আসা দরকার।
রাজ্যপালের ইস্তফার পরে রাজভবনের অভিযুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ দাবি করেছিল মেঘালয়ের নারী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আরও জলঘোলা হওয়ার আগেই রাজ্যপালের সচিব এইচ এম সাংপলিয়াং রাজভবনের দরবার হলে জরুরি বৈঠক ডেকে রাজ্যপালের ব্যক্তিগত সচিব লক্ষ্ণৌয়ের সৌরভ পাণ্ডে, জনসংযোগ অফিসার শিলংয়ের এমডোরিনি থাংখিউ ও অসমের চিন্ময়ী ডেকাকে অপসারিত করেন। বলা হয়, সন্মুগনাথন-নিযুক্ত ওই তিন জনের কার্যকালও তাঁর সঙ্গেই শেষ হচ্ছে। সংপলিয়াং রাজভবনের কর্মীদের অনুরোধ করেন, যা হয়েছে তা ভুলে রাজভবনের সম্মান ফেরাতে এক জোট হয়ে কাজ করতে হবে।
২০১৫-র মে মাসে, বিজেপির সংসদীয় দফতরের সহকারী সচিবের সাধারণ পদ থেকে সন্মুগনাথনকে মেঘালয়ের রাজ্যপাল করা হয়েছিল। মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিএসএফ প্রধান রঞ্জিত শেখর মুশাহারি এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “রাজ্যের সর্বোচ্চ সাম্মানিক পদের এমন অবমাননা অত্যন্ত দুঃখের, লজ্জার। রাজভবনের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারিয়েছেন। তা ফেরাতে হবে। দল না দেখে, ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে যোগ্য লোককেই রাজ্যপালের পদে বসানো উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy