অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই
সিকিম সীমান্তে ভারত ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বলে দাবি করল চিন। সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিকে পাল্টা খোঁচাও দিয়েছে বেজিং।
সিকিম সীমান্তের ডোকা লা-য় আপাতত মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত ও চিনের প্রায় আট হাজার সেনা। চিনের দাবি, ওই এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে তাদের এলাকায় ঢুকেছে ভারতীয় সেনা। ভারতের দু’টি বাঙ্কারও ভেঙে দেয় চিনারা। চিনা সেনারা এগোতে চাইলে মানবশৃঙ্খল গড়ে বাধা দেন ভারতীয় সেনারা।
পাশাপাশি চলছে বাগ্যুদ্ধও। সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি চিনকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘১৯৬২ সালের ভারত আর ২০১৭ সালের ভারতের মধ্যে পার্থক্য আছে।’’ আজ পাল্টা তোপ দেগেছে চিন। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সিকিম সীমান্তে ভারতই ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে। চিনা এলাকা থেকে দিল্লি সেনা সরিয়ে নেবে বলেই তাদের আশা। জেটলিকে পাল্টা কটাক্ষ করে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘‘উনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে চিনও আর ১৯৬২ সালে আটকে নেই।’’
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভুটান ও সিকিম সীমান্তে ভারতের ‘দাদাগিরি’-র বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উষ্মা জমা হচ্ছিল বেজিং-এর। আর সে কারণে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনায় বসতেও চাওয়া হয়েছিল চিনের পক্ষ থেকে। ভারত সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এরপর ভারত-চিন সীমান্তের এই ‘মিডল সেক্টর’ (উত্তরাখণ্ড, হিমাচল এবং সিকিম)-এ সংঘাতমূলক অবস্থান নেওয়া শুরু করে বেজিং।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, তিন মাস আগে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত লুও ঝাউহুই বিদেশ মন্ত্রকের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন। চিনা সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাবটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আর্লি হার্ভেস্ট এগ্রিমেন্ট’। সেখানে বলা হয় ভারত-চিন সীমান্তের পশ্চিম সেক্টর লাদাখ এবং পূর্ব সেক্টর অরুণাচলপ্রদেশে মাঝেমধ্যেই দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে বিবাদ হচ্ছে। তাই ওই সেক্টর দু’টিকে পৃথক এবং বিস্তৃত আলোচনার জন্য সরিয়ে রেখে আপাতত ‘শান্তিপূর্ণ’ সেক্টর সিকিম সীমান্ত নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয় বেজিং। নয়াদিল্লি এই প্রস্তাবটি নিয়ে কোনও জবাব দেয়নি।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বছরের শেষেই দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য গঠিত দ্বিপাক্ষিক মেকানিজমটির (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনের স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়াচি-র নেতৃত্বে) বৈঠক হওয়ার কথা। সার্বিক ভাবে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে সেখানে আলোচনা করাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেছিল দিল্লি। সূত্রের খবর, নয়াদিল্লির আশঙ্কা ছিল এটা একটা চিনা ফাঁদও হতে পারে। একটি সেক্টর নিয়ে আলোচনায় বসে কিছু সুবিধে আদায় করে তারা অন্য দুটি ক্ষেত্রে গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিতে পারে। অথবা প্রথমেই আলোচনা ভেস্তে দিয়ে পরবর্তী মূল আলোচনাকে মন্থর করে দিতে পারে। কূটনীতিকরা অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রকৃত কারণ কিন্তু অন্য। ভুটানকে কাজে লাগিয়ে চিনা সীমান্তের উপরে নজরদারির কৌশল ভারত গোপনে বজায় রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। সেটি নিয়ে বেশি কূটনৈতিক চর্চা হোক তা চায়নি সাউথ ব্লক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy