নরেন্দ্র মোদী
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই বলে প্রায়শই কটাক্ষ করে থাকেন বিরোধীরা। সেই সমালোচনার জবাব দিয়ে এই বিষয়ে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে আজ মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লিতে দলের নতুন সদর দফতরের ভূমি-পুজো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী টেনে আনেন স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রসঙ্গ। আর সেটা করতে গিয়েই বিতর্কে পড়েছেন তিনি। এ দিন মোদী বলেন, ‘‘ইংরেজ আমলে কংগ্রেসকে যত না সমস্যায় পড়তে হয়েছিল, বিজেপি কর্মীদের তার চেয়ে অনেক বেশি সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়।’’ বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, স্বাধীনতার পরে দেশ গঠনে যে আত্মত্যাগ বিজেপি কর্মীরা করেছেন, তা কোনও অংশে কম নয়। মোদীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, অবিলম্বে ক্ষমা চান প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী ওই তুলনা টেনে আসলে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরই অপমান করেছেন।
কাশ্মীর তথা পাকিস্তান নীতির ব্যর্থতা, গো-হত্যা ও দলিত বির্তকের মতো বিষয়গুলি বারংবার সামনে উঠে আসায় গত কয়েক মাস ধরে প্রতি পদে সমস্যায় পড়ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। প্রশ্নের মুখে পড়ছে সরকারের নীতি। সামনেই উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় বিরোধীদের জবাব দিতে ও দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে গিয়ে মোদী বোঝালেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে দলের কোনও ইতিহাস না থাকলেও স্বাধীনতার পরে দেশগঠনের প্রশ্নে অনেক বেশি আত্মত্যাগ করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের কোনও অবদান নেই এই অভিযোগ হামেশাই তোলেন বিরোধীরা। আবার স্বাধীনতার পরে মহাত্মা গাঁধীর হত্যার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের অভিযোগও নতুন নয়। তার মধ্যে রয়েছে দলীয় আইকনের অভাব। কংগ্রেসের অভিযোগ, আইকনের অভাব ঢাকতে কখনও সর্দার পটেল কখনও অম্বেডকরকে ধরে টানাটানি করতে হয় বিজেপিকে। বাদ যান না মহাত্মা গাঁধী থেকে সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু তাতেও নানা রকম কটাক্ষ শুনতে হয় বিরোধীদের কাছ থেকে। এই অবস্থায় দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে আজ অন্য সুরে কথা বলেন মোদী।
এমনিতে নিজের সরকারের কাজকে তুলে ধরতে গিয়ে অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ— এই মূলমন্ত্রকে মাথায় রেখে দেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’’ কিন্তু লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের কী ভাবে প্রতি পদে হেনস্থার শিকার হতে হয়, সেটাও ব্যাখ্যা করতে থাকেন মোদী। তখনই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এমন একট দল, যাদের সব সময় সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের কাজকে সর্বদাই সন্দেহের চোখে দেখা হয়। আমার মতে, আমাদের দলীয় কর্মীদের স্বাধীনতার পরে যত ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে, ইংরেজ আমলে কংগ্রেসকেও তত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি।’’ বিজেপি শিবিরের একটি অংশের মতে, দু’বছর আগে দল ক্ষমতায় এসেছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। কিন্তু তার পরেও সরকার চালাতে গিয়ে যে ভাবে প্রতি পদে বিরোধীদের বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শাসক দলকে, সেটাই আজ ক্ষোভের আকারে ফুটে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর গলায়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করা হতেই ফুঁসে উঠেছে প্রধান বিরোধী দল। তাদের অভিযোগ, এই কথা বলে আসলে কংগ্রেসের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকেই খাটো করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা ফাঁসিকাঠে ঝুলেছেন, জেলে বন্দি থেকেছেন, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আজ অপমান করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আসলে ভারতমাতা-কেই অসম্মান করলেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এর জন্য ক্ষমা চাওয়া। বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার বা তাদের পূর্বসূরিরা কোনও দিন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেননি। উল্টে তাঁরা সে সময়ে ব্রিটিশদেরই সাহায্য করতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy