রক্তপাত হচ্ছে দ্বিগুণ! তবু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্ধারিত মাত্রার বাইরে ‘সিজ়ার’ বা অস্ত্রোপচারে প্রসব চলছে দেদার। তাতে রাশ টানতে এ বার প্রসবের হিসেবে নজরদারির বন্দোবস্ত করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী ২৫ শতাংশ গর্ভবতীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের সাম্প্রতিক হিসেব বলছে, সরকারি মেডিক্যাল কলেজেই সিজ়ারের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। বেসরকারি হাসপাতালে সেটা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি! মায়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত। কেন্দ্র তাই মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের উপরে নজর রাখতে তৈরি ‘লক্ষ্য’ নামে একটি প্রকল্পেই সিজ়ার অডিট পর্যবেক্ষণ করবে।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সিজ়ারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ মূলত রেফার এবং সঙ্কটজনক অবস্থায় প্রসূতিকে ভর্তি করানো। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান আরতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ হল তৃতীয় স্তরের পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা স্তরের হাসপাতালের সঙ্কটজনক রোগিণীকে পাঠানো হয় মেডিক্যাল কলেজে। প্রসূতির অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় সিজ়ার হয়।’’
আরও পড়ুন: আজ ‘ঠান্ডা’ শিলংয়ে প্রশ্ন রাজীবকে
সিজ়ার ও স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে ফি-র তারতম্য রয়েছে। অনেক সময় বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের জন্য প্রসূতিকে চাপ দিয়ে রাজি করানোর অভিযোগ ওঠে। সিজ়ার ব্যয়বহুল হওয়ায় এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি কম বলেও প্রচার চলে। সম্প্রতি মুম্বই-সহ বিভিন্ন শহরের চিকিৎসকদের একাংশ সিজ়ার ও স্বাভাবিক প্রসবে ফি সমান করে দিয়েছেন। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালেও স্বাভাবিক ও সিজ়ার দুই ধরনের প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের হাসপাতালে খরচও এক রাখা হয়েছে। রোগিণী পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নেন।’’
আরও পড়ুন: বই ফেলে দেয় বাবা, পড়তে চেয়ে বাড়ি ছাড়ল কিশোরী
স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, জরুরি অবস্থায় একমাত্র চিকিৎসকই সিজ়ারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে বাছাইয়ের প্রশ্ন থাকলে সে-ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, সিজ়ারের ইতিবাচক দিক নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন, সিজ়ার করলে কোনও শারীরিক কষ্ট নেই। পেশির সমস্যাও হবে না। কিন্তু স্বাভাবিক এবং সিজ়ার দুই পদ্ধতিতেই প্রসবের কিছু সমস্যা রয়েছে। গর্ভবতীদের সেটা জানানো প্রয়োজন। ‘‘সিজ়ারের আগে প্রসূতির অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক করা জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রসূতির অনুমতি নেওয়া হয় না,’’ বলেন মল্লিনাথবাবু।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক প্রসবেই চিকিৎসকদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রসূতির প্রসবযন্ত্রণার শুরু থেকে শিশু জন্মানো পর্যন্ত পুরোটাই চিকিৎসকের দায়িত্ব। সিজ়ারে ৪০ মিনিটে প্রসব প্রক্রিয়া শেষ হয়। স্বাভাবিক প্রসবে তা হয় না। বেশি সময় লাগে। প্রসূতির সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে তাই অনেক সময় চিকিৎসকেরাও সিজ়ারের মাধ্যমে প্রসব করানোটাই পছন্দ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy