— ছবি সংগৃহীত
১৩৭৪ সনে শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘প্রজাপতি’ প্রকাশিত হয়। অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। দাবি ওঠে, এই উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হোক। হাই কোর্ট হয়ে মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় সমরেশ বসু ও প্রকাশকের হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী জি এল সাঙ্ঘি। সাঙ্ঘি বলেছিলেন, সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ তাঁর নিজের পরিবেশে ব্যবহারে অভ্যস্ত ভাষাই ব্যবহার করেন। সেই চরিত্রকে উপন্যাসে তুলে আনতে হলে সাহিত্যিককে সেই ভাষাই ব্যবহার করতে হবে। লেখক এই উপন্যাসে সেই কাজই করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট অশ্লীলতার দায় থেকে ‘প্রজাপতি’-কে মুক্ত করেছিল।
প্রজাপতি মামলার সেই আইনজীবী, জি এল সাঙ্ঘির মতোই এখন সাড়া ফেলেছেন পুত্র বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি। দেশের রাজধানীতে অক্সিজেনের অভাব নিয়ে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিচারপতি সাঙ্ঘির বেঞ্চ। তাঁরই নির্দেশে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সক্রিয় হয়ে অক্সিজেনের জোগানে মাঠে নামতে হয়েছে। কারণ, বিচারপতি সাঙ্ঘির নির্দেশ, ধার করে হোক বা ভিক্ষে করে হোক, কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় মোদী সরকারকে অক্সিজেন জোগাতেই হবে।
অক্সিজেনের অভাবে দিল্লির একের পর এক হাসপাতাল এখন রাতবিরেতেও দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে। রাতবিরেতেই সময়ের বিচার না করে জরুরি শুনানিতে বসছেন বিচারপতি সাঙ্ঘি। সঙ্গে থাকছেন বিচারপতি রেখা পাল্লি। ভিডিও কনফারেন্সে হাইকোর্টের শুনানিতে এত বেশি সংখ্যায় আইনজীবী, সাংবাদিকরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিচ্ছেন যে বিচারপতিরা নিজেরাই যোগ দিতে পারছেন না। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও বিচারপতিরা থামছেন না। বিচারপতি রেখা পাল্লি ফোন করছেন বিচারপতি সাঙ্ঘিকে। তাঁর ফোন চালু রেখেই বিচারপতি সাঙ্ঘি শুনানি চালাচ্ছেন।
গোটা দিল্লি জুড়ে এখন চূড়ান্ত কৌতূহল—কারা এই দুই বিচারপতি? যাঁরা মানুষের স্বার্থে গভীর রাতেও মামলা শুনতে পারেন? প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিয়ে নাকানিচোবানি খাওয়াতে পারেন কেন্দ্রীয় সরকারকে? বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘির বাবা জি এল সাঙ্ঘি ও ঠাকুর্দা ভি কে সাঙ্ঘি দুজনেই প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। অঙ্ক নিয়ে স্নাতক হওয়ার পরে আইন পাশ করে বিপিন নিজেও দীর্ঘদিন ওকালতি করেছেন। রাজীব গাঁধীর হত্যার তদন্তে গঠিত এম সি জৈন কমিশনের কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন।
বিচারপতি রেখা পাল্লিরও পড়াশোনা ও ওকালতির শুরু দিল্লিতেই। ২০১০-এ বায়ুসেনায় স্থায়ী কমিশনের দাবিতে ন’জন মহিলা অফিসার দিল্লি হাই কোর্টের কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের হয়ে মামলা লড়েছিলেন রেখা পাল্লি। হাই কোর্ট মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশনে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। আবার বিচারপতি হিসেবে তিনিই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিব আহমেদের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় দিল্লির পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না অভিযোগ পেয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
গত বছর দিল্লির হিংসায় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ সত্ত্বেও কেন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করছে না, তা নিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর কেন্দ্রকে তোপ দেগেছিলেন। ঘটনাচক্রে,তারপর তাঁর বদলির নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। এ বার বিচারপতি সাঙ্ঘি ও বিচারপতি পাল্লি যে ভাবে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলছেন, তাতে আইনজীবী শিবিরের আশঙ্কা—ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy