ছ’মাস অপেক্ষার পর, এক তরফা ভাবে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করা জঙ্গি গোষ্ঠী, এনএসসিএন-খাপলাংকে ফের নিষিদ্ধ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। আপাতত ৫ বছরের জন্য খাপলাং গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নাগাল্যান্ডের সরকার থেকে সমাজ, বিভিন্ন স্তরে। সমালোচনায় মুখর বিভিন্ন সংগঠন।
২০০১ সালে সংগ্রামের রাস্তা ছেড়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছিলেন খাপলাং। কিন্তু ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও গত বছর মায়ানমারের সঙ্গেও সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেন খাপলাং। তাঁর সংগঠনও মূলত মায়ানমারের নাগাদের সংগঠন হয়ে ওঠে। এরপর এ বছর মার্চে হঠাত্ করেই বিবৃতি পাঠিয়ে ভারতের সঙ্গে ১৪ বছরের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি খারিজ করার কথা জানান খাপলাং।
অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে সেনাবাহিনী ও আসাম রাইফেলসের উপরে ধারাবাহিক আক্রমণ চালায় খাপলাং জঙ্গিরা। আলফার পরেশ বরুয়া, কেএলওর জীবন সিংহ, এনডিএফবির বি সাউরাইগাউরার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইউএনএলএফডব্লিউ নামে একটি যৌথ জঙ্গি মঞ্চও গড়েন খাপলাং। এপ্রিলে অরুণাচলের টিরাপ জেলায় রাজপুত রেজিমেন্টের কনভয়ে হানা দিয়ে তিন জওয়ানকে হত্যা করে তারা। পরের মাসে নাগাল্যান্ডের মন জেলায় আসাম রাইফেলস-এর কনভয়ে হামলা চালিয়ে ৮ জওয়ানকে হত্যা করে খাপলাং-আলফা জোটের জঙ্গিরা। জুনে মণিপুরের চান্ডেলে যৌথ মঞ্চের হামলায় ডোগরা রেজিমেন্টের ১৮ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়।
জুনের ঘটনার পরে খাপলাং গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাব ওঠে। ইয়াঙ্গনের হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ খাপলাং। তাঁর ও খাপলাং বাহিনীর সেনা উপদেষ্টা নিকি সুমির খবর দিতে পারলে এনআইএ যথাক্রমে ৭ ও ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে। এর পর আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব অনুমোদন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ১৯৬৭ সালের বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনের আওতায় খাপলাং গোষ্ঠীকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। খাপলাং-এর সঙ্গ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসা ওয়াংতিং নাগার নেতৃত্বাধীন এনএসসিএন-রিফর্মেশনের সঙ্গে অবশ্য কেন্দ্র সংঘর্ষবিরতি চুক্তি সেরে ফেলেছে।
গোয়েন্দাদের মতে, এখন যৌথ মঞ্চে সশস্ত্র জঙ্গির সংখ্যা প্রায় ৮০০। আপাতত মঞ্চের নেতৃত্ব পরেশ বরুয়ার হাতে। পরেশের নেতৃত্বে, কেবল মানায়মার সীমান্তবর্তী মণিপুর, নাগাল্যান্ডে আটকে না থেকে অরুণাচল ও অসমেও ঢুকতে চেষ্টা করছে তারা। আসাম রাইফেলসের দাবি, জোর করে নাগাল্যান্ড সীমান্তের গ্রামগুলি থেকে নাবালকদের
তাদের বাহিনীতে নিয়োগ করছে খাপলাং গোষ্ঠী। সেই সঙ্গে চলছে মাদক পাচারও। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়নি নাগাল্যান্ড সরকার ও নাগাল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার পরেই রাজ্যের তিনটি সংগঠন—ইএনপিও, নাগা হো হো ও নাগা মাদার্স অ্যাসোসিয়েশন খাপলাং গোষ্ঠীকে ফের সংঘর্ষবিরতির পথে ফেরাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইয়াঙ্গনের হাসপাতালেও তাঁদের প্রতিনিধিদের যাওয়ার কথা। এই অবস্থায় কেন্দ্র আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারত। রাজ্য সভা সাংসদ খেকিহো জিমোমি বলেন, ‘‘পুরো ঘটনায় আমরা অবাক। পরিষদীয় কমিটি ও বিধায়কদের কমিটি শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তারপরেও কেন্দ্র কেন তাড়াহুড়ো করল!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এনএসসিএন (আইএম)-এর সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আমরা খুশি। কিন্তু খাপলাংও সমান গুরুত্বপূর্ণ, সংঘর্ষবিরতি করলেও কেন্দ্র ১৪ বছরে ওদের সঙ্গে একবারও কথা বলেনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নাগা সমাজের কিন্তু একটাই দাবি, সব সংগঠনকে নিয়ে শান্তি-প্রক্রিয়া চালাতে হবে। ভারত সরকার কী চাইছে জানি না। আমরা বিজেপি জোটে আছি। এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমি আশাবাদী, নিরাপত্তার
কারণে খাপলাংদের নিষিদ্ধ করা হলেও ভারত ও খাপলাং আলোচনার রাস্তা বন্ধ করবে না।’’ নাগা ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য, ভারত সরকার একটি দলের সঙ্গেই আলোচনা করবে, তাদেরই উপরে তুলবে, অন্য সংগঠনদের
পাত্তা দেবে না, তা হয় না। এ ভ্রান্ত নীতি। খাপলাং নেতা নিকি ও আইজ্যাক সুমিরা ভারতীয় নাগা। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল।
তার মধ্যেই এই ঘটনা বিশ্বাসভঙ্গের সামিল। তাঁদের অভিযোগ, নাগা সমাজকর্মীদের ফোনও ট্যাপ করছে পুলিশ। নাগাল্যান্ডে বিভেদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও অবিশ্বাসের নীতি নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy