Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

খাপলাংকে সরিয়েই আলোচনা চায় কেন্দ্র

কেন্দ্রের সাড়া না পেলেও জঙ্গি সংগঠন একতরফা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে— এমন অনেক নজির রয়েছে। শান্তি আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে এমনই দস্তুর। এনএসসিএন খাপলাং বাহিনীর ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাহিনীর প্রধান এস এস খাপলাং কেন্দ্রের সঙ্গে ১৫ বছরের সংঘর্ষবিরতি ভেঙে দিয়েছেন। মণিপুরের পিএলএ, অসমের পরেশপন্থী আলফা ও সংবিজিৎ বাহিনীকে ঘাঁটিতে আশ্রয় দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর কথাও ঘোষণা করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

কেন্দ্রের সাড়া না পেলেও জঙ্গি সংগঠন একতরফা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে— এমন অনেক নজির রয়েছে। শান্তি আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে এমনই দস্তুর। এনএসসিএন খাপলাং বাহিনীর ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাহিনীর প্রধান এস এস খাপলাং কেন্দ্রের সঙ্গে ১৫ বছরের সংঘর্ষবিরতি ভেঙে দিয়েছেন। মণিপুরের পিএলএ, অসমের পরেশপন্থী আলফা ও সংবিজিৎ বাহিনীকে ঘাঁটিতে আশ্রয় দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর কথাও ঘোষণা করেছেন। কাজেও তা দেখাচ্ছে খাপলাং বাহিনী। নাগাল্যান্ডে অসম রাইফেল্স ও অরুণাচলে সেনাবাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্টের উপরে হামলায়য় তিন জওয়ান খুন ও ৭ জওয়ান জখম হয়েছেন। কিন্তু, কেন্দ্র এখনও খাপলাং বাহিনীর উপরে পাল্টা আক্রমণ না চালিয়ে একতরফা সংঘর্ষবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে।

শান্তি আলোচনার পক্ষে থাকা খাপলাং বাহিনীর দুই বহিষ্কৃত নেতা ওয়াংতিং কন্যাক ও পি তিখাক নতুন শাখা গড়তে পারেন। নবগঠিত সেই শাখাকেই স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি আলোচনা চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, খাপলাং বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ভাঙার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে। না হলে, ২৭ মার্চ খাপলাং সংঘর্ষবিরতি ভাঙার পরই নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলে তাদের শিবিরে আক্রমণ হত। ‘সংঘর্ষবিরতি তদারক সেল’-এর পরামর্শমতো কেন্দ্র দেখে নিচ্ছে খাপলাং-এর সঙ্গে বর্তমানে কত জন সদস্য রয়েছে।

খাপলাং বাহিনীর সদস্যরা ১৫ মার্চের পর থেকে মায়ানমার যেতে শুরু করেছে। ওই বাহিনীর ভারতীয় ভূখণ্ডের সেনা প্রধান নিকি সুমিও মায়ানমার গিয়েছেন। তাদের কাউকেই বাধা দেয়নি যৌথ বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, খাপলাং মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি করেছেন। তার সদর দফতরও মায়ানমারের সাগায়িং-এ। খাপলাং পক্ষের জঙ্গিরা সকলে দেশ ছেড়ে মায়ানমার চলে যাওয়ার পরই, সংঘর্ষবিরতি ভেঙে খাপলাং বাহিনীকে পড়শি দেশের জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে পারে নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের সঙ্গে এনএসসিএন-এর শান্তি আলোচনায় খাপলাংদের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব শম্ভু সিংহ আনন্দবাজারকে জানান, খাপলাং বাহিনী সংঘর্ষবিরতি ভেঙেছে। কেন্দ্রের দায় নেই। তাদেরই অন্য শাখা শান্তি ও সংঘর্ষবিরতির পক্ষে। খাপলাংদের অনেক সদস্যই আলোচনাপন্থী শাখায় যোগ দিচ্ছে।

এনএসসিএন (আইএম) ও এনএসসিএন (খুলে কিতোভি) গোষ্ঠী দু’টিকে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরিয়ে আনতে সফল হয়েছে কেন্দ্র। এক মাত্র খাপলাংকে বাগে আনা যাচ্ছিল না। এ বার খাপলাং নিজে থেকে চুক্তি ভাঙায় তাকে একেবারে সরিয়ে শান্তি আলোচনা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রের সুবিধাই হবে। তাই, এখনই খাপলাং বাহিনীর উপরে আক্রমণ হানা হচ্ছে না। খাপলাংদের উপরে আক্রমণে নাগা জঙ্গিরা মারা গেলে নাগাল্যান্ডেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তা এড়াতে চাইছে কেন্দ্র।

১৯৮০ সালে এনএসসিএন তৈরি হয়। ১৯৭৫ সালে শিলং চুক্তির পর ইসাক চিসি সু ও মুইভার থেকে পৃথক হয়ে যান খাপলাং। ১৯৯৭ সাল থেকে আইএম গোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা চলছে। ২০০৮ সালে কেন্দ্র জানায়, কোনও একটি শাখার সঙ্গে শান্তি চুক্তি হলে নাগা সমস্যা মিটবে না। সব গোষ্ঠীকে রাজি হতে হবে। আইএম বাহিনীর প্রধান থুইংলেং মুইভা অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সকলকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। খাপলাং রাজি হননি। ফলে খাপলাং গোষ্ঠী ভেঙে যায়। খুলে-কিতোভি আলোচনার পক্ষে মত দিয়ে পৃথক শাখা গড়েন। কেন্দ্রের তরফে আইএম ও খুলে-কিতোভি বাহিনীকে জানানো হয়েছে, শান্তি চুক্তির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE