প্রতীকী ছবি।
তাৎক্ষণিক তালাককে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে আগেই। তবু যে তা বন্ধ হয়েছে, এমন নয়। এ বার তাই আগের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আইন করতে চলেছে এই কুপ্রথার অবসান ঘটাতে। সরকারের একটি সূত্র আজ এই দাবি করেছে। যদিও সরকারের তরফে কোনও মন্ত্রী বা মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে কোনও ঘোষণা না করায়, এখনও কিছুটা সংশয় থেকে গিয়েছে।
সরকারি সূত্রটির দাবি, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই এ নিয়ে বিল আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বিলের রূপরেখা নিয়ে সুপারিশ করতে মন্ত্রিসভার একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক তিন তালাক তথা তালাক-এ-বিদ্দৎ দিলে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে কী শাস্তির ব্যবস্থা রাখা দরকার, সে ব্যাপারেও সুপারিশ জানাবে মন্ত্রিসভার ওই কমিটি।
মৌলবি যদি নিষ্পত্তি করতে না পারেন, তবে তাৎক্ষণিক তালাকের অভিযোগ নিয়ে মহিলারা পুলিশের দ্বারস্থ হতেই পারেন। কিন্তু পুলিশও অসহায়। শীর্ষ আদালত গত অগস্ট মাসে তালাক-এ-বিদ্দৎ-কে অবৈধ বলে রায় দিলেও এই কাজের জন্য শাস্তির কোনও বিধান নেই বর্তমান আইনে। এবং তারই সুযোগ নিয়ে মুখে বা চিঠিতে, ফোন বা ইন্টারনেটে এমন তালাক দেওয়ার ঘটনা ঘটছে
শীর্ষ আদালতের রায়ের পরপর অবশ্য কেন্দ্র উল্টো অবস্থানের কথাই জানিয়েছিল। বক্তব্য ছিল, নতুন আইন তৈরির প্রয়োজন নেই। ওই রায়ই দেশের আইন বলে গণ্য হবে। মহিলারা এখন অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে পারবেন। কিন্তু সম্প্রতি তাৎক্ষণিক তালাকের বেশ কিছু খবর সামনে আসায় বিভিন্ন মহল থেকেই সরকারের উপরে চাপ বাড়ছে একটি আইন করার জন্য।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও মুসলিমদের একাংশ ও অন্য অনেকে মত দিয়েছিলেন, শিক্ষার অভাবেই এই প্রথা চলছে। আইন করে নয়, মুসলিম সমাজকে তালাকের সঠিক পথ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। বাস্তবে দেখা যায়, অভাবটা শিক্ষার নয়। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক সম্প্রতি তাঁর বিবিকে হোয়াটসঅ্যাপে তিন তালাক লিখে পাঠান। যা নিয়ে সরগরম হয় ওঠে সংবাদমাধ্যম।
সরকারি সূত্রে সংসদের শীত অধিবেশনে বিল আনার কথা বলা হলেও কবে তা পাশ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যতিক্রম থাকলেও অন্যান্য বছর নভেম্বরে শুরু হয়ে থাকে শীত অধিবেশন। এ বছর তা ডিসেম্বরে হবে। ফলে অধিবেশনের মেয়াদ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, গুজরাতে একেবারে ভোটের মুখে এসে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসলে ওই রাজ্যের মুসলিম মহিলাদের মন জয়ের মরিয়া চেষ্টা। নয়তো শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেই সরকার আইন করতে উদ্যোগী হতো।
জিএসটির হার কমানো নিয়ে পি চিদম্বরম সম্প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন গুজরাতের ভোটকে। তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শাস্তি বিধানে তৎপরতার পিছনেও সে-ই গুজরাত ভোট! বিষয়টিকে এ ভাবে দেখছেন না সমাজকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পাকিস্তান, সৌদি আরবের মতো মুসলিম দেশে তালাক-এ-বিদ্দৎ নিষিদ্ধ আগে থেকেই। সরকার যদি নীতিগত ভাবে ভারতে এই কুপ্রথা বন্ধে আইন করতে সম্মত হয়, সেটা গুরত্বপূর্ণ ও সামাজিক ভাবে অর্থবহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy