আঙ্কল রবিন
শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃতি পাচ্ছে ‘আঙ্কল রবিন’স ক্যাম্প’।
জন্মসূত্রে বহরমপুরের ছেলে রবিন। জন্ম ১৯০৮ সালে। রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে তখন শান্তিনিকেতন উজ্জ্বল। সেখানেই বহরমপুরের রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়াশোনা। সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এর পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত গমন। লিভারপুল ও এডিনবরা থেকে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন ব্রিটিশ রয়্যাল নেভিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ফিরে আসেন দেশে। শুরু হয় চিকিৎসকের জীবন। এই সময় এক স্কটিশ বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে যান অসমের কাজিরাঙায়। প্রথম দর্শনেই প্রেম। শহর কলকাতার স্বাচ্ছন্দ্য, চিকিৎসক হিসেবে যশ-প্রতিপত্তি সব কিছু পিছনে ফেলে চাবুয়া চা-বাগানের ডাক্তার হিসেবে রয়ে যান অসমে। চা-বাগানে ডাক্তারির পাশাপাশি অকৃতদার রবিনবাবু সারাজীবন সংসার করেছেন জঙ্গলের সঙ্গেই। তৈরি করতে থাকেন কাজিরাঙার বিভিন্ন দিক নিয়ে তথ্যচিত্র। পাশাপাশি শুরু করেন জঙ্গলের স্থির চিত্রের একটার পর একটা অ্যালবাম তৈরি কাজও। কাজিরাঙার মানুষ তাঁকে ভালবেসে ‘আঙ্কল রবিন’ নামেই ডাকতেন।
১৯৬১ সালে বার্লিন টিভির জন্য তিনি ‘কাজিরাঙা’ নামে ৫০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। একশৃঙ্গ গন্ডারের চারণভূমি কাজিরাঙা সেই প্রথম বিশ্বের দরবারে পৌঁছয়। পরে তৈরি করেন ‘রাইনো ক্যাপচার’, ‘ওয়াইল্ডলাইফ অব ইন্ডিয়া’, ‘নাগাল্যান্ড’, ‘ফ্লাইং রেপটাইল্স অব ইন্দোনেশিয়া’, ‘অ্যানিম্যাল্স অব আফ্রিকা’, ‘আন্ডারওয়াটার’, ‘আলাস্কান পোলার বিয়ার’, ‘ইন দ্য প্যাসিফিক’-এর মতো তথ্যচিত্র। তাঁর তৈরি তথ্যচিত্রের সংখ্যা ৩২। বেশ কিছু স্থিরচিত্র বিদেশে একাধিক পুরস্কার পায়। ১৯৭১ সালে তিনি পদ্মশ্রী পান।
‘কাজিরাঙা ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি’ তাঁর হাতেই তৈরি। সোসাইটির সদস্য মুবিনা আখতার জানান, গোলাঘাটের যে বাড়িতে রবীনবাবু থাকতেন তা সার্কিট হাউস করার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তিনি যে ভাবে বাড়িটিকে ঘিরে জীব-সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তাতে খুশি হয়ে অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী বাড়িটি রবীনবাবুকে দেন। ২০০৩ সালে সেখানেই তিনি মারা যান। সেখানেই গড়ে উঠেছে সংগ্রহশালা। ‘আঙ্কল রবীন’স ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম’। সংগ্রহশালা ঢেলে সাজতে সম্প্রতি কেন্দ্র প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। প্রথম দফায় ৪০ লক্ষ বরাদ্দ হয়েছে। সেখানে রয়েছে রবীনবাবুর আঁকা ২০০টি ছবি, ১৯টি পুরস্কার পাওয়া স্থিরচিত্র, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা ৫৮৭টি পুতুল, ২৬২টি অন্যান্য সামগ্রী এবং তাঁর তৈরি ৩২টি তথ্যচিত্রের রিল। ২০০৩ সালে রবীনবাবুর তৈরি তথ্যচিত্রগুলিকে ডিজিটালাইজ্ড করেছে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy