Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Cash for Query Case

মহুয়ার আগেও ‘অর্থ নিয়ে প্রশ্ন’ অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির ছ’জন-সহ ১১ সাংসদ সাজার মুখোমুখি হন

এখন মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ। আর ইউপিএ জমানায় যে ১১ জন সাংসদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের ছ’জনই ছিলেন বিজেপির। তখন কী বলেছিল বিজেপি?

২০০৫ সালের ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় রাজনীতিতে।

২০০৫ সালের ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩১
Share: Save:

অর্থ ও উপহারের বিনিমিয়ে লোকসভায় ব্যবসায়ী দর্শন হীরনন্দানির হয়ে প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র— এই অভিযোগ তুলে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে মহুয়ার সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। সেই চিঠিতে ২০০৫ সালের একটি নজিরের উল্লেখও করা হয়েছে। সেই সময়ে একই ধরনের অভিযোগে সাংসদ পদ খোওয়াতে হয়েছিল ১১ জনকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির ছ’জন। এখন বিজেপি মহুয়ার বিরুদ্ধে সরব হলেও সেই সময়ে দলের সাংসদদের বাঁচাতে কম চেষ্টা করেনি গেরুয়া শিবির। তবে শেষরক্ষা হয়নি।

এ বার এখ দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির থেকে মহুয়া অর্থ ও উপহার নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছেন বলে অভিযোগ। যা স্বীকারও করে নিয়েছেন হীরানন্দানি। তবে ২০০৫ সালের যে ঘটনা, তাতে ১১ সাংসদকে হাতে করে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। একটি বেসরকারি চ্যানেল ২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেই সব ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, সংসদে পছন্দমতো প্রশ্ন করার জন্য তাঁরা নগদ অর্থ নিচ্ছেন।

অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে ছিল তাঁদের ছ’জন বিজেপি সাংসদ এবং তিন জন ছিলেন মায়াবতির দল বিএসপির। এ ছাড়াও ছিলেন কংগ্রেসের এক জন এবং লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি দলের এক সাংসদ। বিজেপির ছিলেন ওয়াইজি মহাজন, ছত্রপাল সিংহ লোধা, অন্নাসাহেব এমকে পাতিল, চন্দ্রপ্রতাপ সিংহ, প্রদীপ গান্ধী, সুরেশ চান্দেল। বিএসপির ছিলেন নরেন্দ্রকুমার খুশওয়া, লালচন্দ্র কোল এবং রাজা রামপাল। বাকি দু’জন কংগ্রেসের রামসেবক সিংহ এবং আরজেডির মনোজ কুমার। এঁদের মধ্যে লোধা ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। বাকিরা লোকসভার।

সেই সময়ে লোকসভার স্পিকার ছিলেন বাংলার সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত কমিটি তৈরি করেছিলেন। কমিটির শীর্ষে ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ পবনকুমার বনসল। কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরে পরেই লোকসভায় বিষয়টির উত্থাপন করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনিই তখন সংসদের নিম্নকক্ষে কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন। একই প্রস্তাব রাজ্যসভায় আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিংহ। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ১০ দিনের মাথায় লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে ১১ সাংসদ বহিষ্কৃত হন।

সংসদের ভোটাভুটি অবশ্য বয়কট করেছিল বিজেপি। তখন বিরোধী দলনেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী ভোটাভুটিকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন। নিজের দলের সাংসদের ‘অপকর্ম’ নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, এটা যত না দুর্নীতি তার চেয়ে বেশি বোকামি। একই সঙ্গে সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে বাড়াবাড়ি বলে দাবি করেছিলেন আডবানী।

বিষয়টি আদালতেও যায়। দিল্লি কোর্টে চার্জশিটও জমা পড়ে। ওই ১১ সাংসদই সংসদের সিদ্ধান্তকে চ্যালঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান। পাল্টা প্রশ্ন উঠেছিল যে, আদালত কি আদৌ সংসদীয় প্রক্রিয়ার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে? ২০০৭ সালে জানুয়ারিতে রায় ঘোষণা স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্ট। এই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিলেন আরও দু’জন। বিএসপি বিধায়ক রামপালের আপ্ত সহায়ক রবীন্দ্র কুমার এবং মধ্যস্থতাকারী বিজয় ফোগট। গোপন ক্যামেরায় সাংসদদের ঘুষ নেওয়ার ভিডিয়ো বানানোর অভিযোগ দিল্লি পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল দুই সাংবাদিক অনিরুদ্ধ বহাল এবং সুহাসিনী রাজকে। যদিও পরে আদালত তাদের মুক্ত করে দিয়ে বলে, ‘স্টিং অপারেশন’ চালানোর জন্য কেউ সাজা পেতে পারেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Mahua Moitra TMC BJP Cash for Queries
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE