চিনের সঙ্গে উত্তেজনার পারদ এখন এতটাই চড়ে গিয়েছে যে এ বার তা কমাতে ব্যগ্র মোদী সরকার।— ফাইল ছবি।
চিন নিয়ে প্রবল চাপের মধ্যে আগামিকাল সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে মোদী ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতি দেখিয়ে বিদেশনীতিতে ‘একলা চলার’ পথে হাঁটছিলেন, তাঁর কেন চিন-সমস্যা নিয়ে হঠাৎ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকার যখন বিরোধী দলগুলিকে পাশে চাইছে, তখন চিন নিয়ে তাদের নিজের ঘরেই সংঘাতের পরিস্থিতি। সীমান্তে সংঘাতের মধ্যেও কী কারণে কেন্দ্র চিনা সংস্থাগুলিকে ভারতে ব্যবসার সুবিধা করে দিচ্ছে, মোদীকে চিঠি লিখে সেই প্রশ্ন তুলেছে সঙ্ঘের শাখা সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। এমনকী, চিনা সংস্থা থেকে কলকাতার মেট্রোর কামরার বরাত বাতিলেরও দাবি তুলেছেন মঞ্চের জাতীয় আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন।
তবে চিন নিয়ে চাপের মধ্যে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে অভিনব। কারণ, ড্রাগনের মোকাবিলা কী ভাবে হবে, তা ঠিক করতে দেশে সর্বদলীয় বৈঠকের ঘটনা নজিরবিহীন। এর আগে কাশ্মীরে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে একাধিক বার সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ১৯৬২-র যুদ্ধের পরে চিনকে নিয়ে এমন মরিয়া বৈঠক এই প্রথম। কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ, গত কয়েক দশকে বেজিং-এর সঙ্গে সমস্যা এমন পর্যায়ে যায়নি যে বিরোধীদের পাশে নিয়ে জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলতে হয়। আর পাকিস্তান ও চিন— একই সঙ্গে বৈরিতার দরজাও কখনও খুলতে চায়নি ভারত।
আরও পড়ুন:অমর্ত্য নিয়ে নীরবতাই নতুন কৌশল
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, চিনের সঙ্গে উত্তেজনার পারদ এখন এতটাই চড়ে গিয়েছে যে এ বার তা কমাতে ব্যগ্র মোদী সরকার। আজ বিদেশ মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামিকাল সরকারের তরফে বিরোধীদের অনুরোধ জানানো হবে, সিকিম সীমান্তে যে হেতু যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, তাই চিনের বিষয়টি নিয়ে সংসদে যেন সরকারকে সহযোগিতা করেন তারা। মোদী সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের মতে, এটা দেশপ্রেমের প্রশ্ন। এ নিয়ে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করলে সুবিধা পেয়ে যাবে বিদেশী রাষ্ট্র। সূত্রের মতে, সম্প্রতি চিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর বৈঠকের পরে চাপে পড়েছে কেন্দ্র। রাহুল নিজেও বেজিং সম্পর্কে মোদীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে কোণঠাসা করতে চেয়েছেন।
সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, এ মাসের শেষ সপ্তাহে বেজিং যেতে পারেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ব্রিকস-এর আগে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ডোভালের চিন-যাত্রা যথেষ্ট তাৎপর্যের। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলেও ডোকা লা-য় উত্তেজনা কমাতে ‘কূটনৈতিক চ্যানেল’-এর উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দেশের দূতাবাসগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।’’
গত সপ্তাহে জার্মানির হামবুর্গে জি-২০-র পার্শ্ববৈঠকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর সঙ্গে দেখা হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর। যদিও চিনের বক্তব্য, কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকই সেখানে হয়নি। চিনের এই বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়ে আজ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় পাঁচ মিনিট মোদী ও শি চিনফিং-এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় ডোকা লা ভূখণ্ডের উত্তেজনার বিষয়টিও ছিল বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ডাকা আগামিকালের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। চিন পরিস্থিতি নিয়ে মোদী সরকারের আর্জিতে বিরোধীরা এখন কী ভূমিকা নেন, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy