চিন আর পাকিস্তানের চিন্তা বাড়িয়ে ভারতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের কারখানা গড়তে চলেছে বোয়িং। যুদ্ধক্ষেত্রে কালান্তক যম হিসেবে পরিচিত অ্যাপাচে হেলিকপ্টার এ বার এ দেশেই তৈরি করতে চাইছে সংস্থাটি। শক্তিশালী দেশগুলির বিমানবাহিনীর অন্যতম সেরা ভরসা যে চিনুক হেলিকপ্টার, বোয়িং ভারতে সেই চিনুক তৈরির কথাও ভাবছে।
অ্যাপাচে এবং চিনুক আধুনিক যুদ্ধে অপরিহার্য। বোয়িং-এর তৈরি এই দুই ধরনের হেলিকপ্টার মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছে মেরুদণ্ডের মতো। উপসাগরীয় যুদ্ধ হোক বা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি দমন অভিযান— সর্বত্রই অ্যাপাচের ভয়ঙ্কর হামলা ছিল মার্কিন বিমানবাহিনীর দ্রুত সাফল্যের অন্যতম কারণ। অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচে আকাশ থেকে ঝড়ের মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে যুদ্ধক্ষেত্রে। এই হেলিকপ্টার থেকে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েও হামলা চালানো যায়। অত্যাধুনিক সেন্সরের দৌলতে অ্যাপাচে রাতের অন্ধকারেও নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।
দৈত্যাকার চিনুক হেলিকপ্টারও আমেরিকা, চিন, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া-সহ অনেকগুলি দেশের বিমানবাহিনীর কাছে খুব নির্ভরযোগ্য। কম সময়ে বাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, ভারী যুদ্ধাস্ত্র বহন করা, ক্যাম্প তৈরির মালপত্র অস্বাভাবিক দ্রুততায় দুর্গম থেকে দুর্গমতর এলাকায় নিয়ে যাওয়া— এই রকম নানা কাজের জন্য চিনুক আধুনিক যুদ্ধে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ভাঁড়ারে চিনুক থাকলেও অ্যাপাচে এখনও চিনা বিমানবাহিনীর নাগালের বাইরে। পাকিস্তানের কাছে এই দুই কপ্টারের কোনওটাই নেই। ভারতের হাতে অ্যাপাশে এবং চিনুক আগে থেকেই রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। গত মাসেই আরও ২২টি অ্যাপাচে এবং ১৫টি চিনুক হেলিকপ্টার কেনার জন্য ভারত সরকার ৩০০ কোটি ডলারের বরাত দিয়েছে বোয়িংকে। সেই ৩৭টি হেলিকপ্টার যত দ্রুত সম্ভব ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে নির্মাতা সংস্থা। পাশাপাশি, ভারতে সমর সরঞ্জামের বাড়তে থাকা চাহিদা এবং মোদী সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানের কথা মাথায় রেখে বোয়িং এ বার অ্যাপাচে বা চিনুকের মধ্যে যে কোনও একটি হেলিকপ্টারের কারখানা ভারতেই বানানোর বিষয় চিন্তা করছে। বোয়িং-এর সিইও জেমস ম্যাকনার্নি একটি নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। ভারতে শুধু হেলিকপ্টার তৈরি করেই ক্ষান্ত থাকবে না বোয়িং। ম্যাকনার্নি জানিয়েছেন, তাঁদের হেলিকপ্টার তৈরির অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও তাঁরা ভারতের হাতে তুলে দেবেন। সেই প্রযুক্তি ভারত চাইলে অন্য ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারবে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার বোয়িং-এর এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেই ম্যাকনার্নির আশা।
অ্যাপাচে বা চিনুক ভারতে তৈরি হওয়া শুরু হলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে যাবে ভারতীয় বিমানবাহিনী, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনতে হলে ভারতকে এখন বিদেশি সংস্থার হাতে বরাত দিয়ে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়। অ্যাপাচে বা চিনুক ভারতে তৈরি হওয়া শুরু হলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত তা বিমানবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। বোয়িং-এর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে কপালে ভাঁজ ফেলেছে চিন ও পাকিস্তানের। কিন্তু, অ্যাপাচে বা চিনুকের প্রযুক্তি ভারতের হাতে আসা আটকানোর পথও খুঁজে পাচ্ছে না এই দুই প্রতিবেশী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy