Advertisement
E-Paper

ইজ়রায়েলে লড়ছেন ‘মণিপুরের’ বেনে মেনাশে

‘হোমল্যান্ড’ কথাটা হসুয়ানমাং বা তাঁর মতো বেনে মেনাশেদের ক্ষেত্রে খুবই জটিল। কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে। তাই জন্মভূমি, মাতৃভূমি, পিতৃভূমি সবই সেই অর্থে মণিপুর।

bnei menashe of manipur is fighting for israel

ইজ়রায়েলে সেনার উর্দিতে ‘মণিপুরের’ হসুয়ানমাং। —নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫৮
Share
Save

টেলিস্কোপ সাঁটা এম-১৬ রাইফেলটা উল্টো করে গলায় ঝোলানো। অয়্যারলেস রেডিয়ো সেটটা বুকে আঁটা। গাড়িতে বসে ‘হোমল্যান্ড’-এর জন্য লড়াইয়ের কথা বলছিলেন হসুয়ানমাং ওরফে ইয়েহোসুয়া মেনাশে।

অবশ্য ‘হোমল্যান্ড’ কথাটা হসুয়ানমাং বা তাঁর মতো বেনে মেনাশেদের ক্ষেত্রে খুবই জটিল। কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে। তাই জন্মভূমি, মাতৃভূমি, পিতৃভূমি সবই সেই অর্থে মণিপুর। কিন্তু তিনি যে হোমল্যান্ডের জন্য রাইফেল ঝুলিয়ে ঝুদ্ধে চলেছেন- তা হল মণিপুর থেকে প্রায় ৫৭৮০ কিলোমিটার দূরে। ইজ়রায়েল।

পূর্বপুরুষদের জন্মকর্ম মণিপুর, মিজোরামে। সেখানকার জো-কুকিদের সঙ্গেই মিশে থাকলেও জন্মভূমিকে কোনও দিনও নিজের বলে মেনে নিতে পারেননি বেনে মেনাশেরা। ‘বেনে মেনাশে’ হিব্রু শব্দ। কথাটির অর্থ মেনাশের সন্তান। নিজেদের ইজরায়েলের ভূমিপুত্র হিসেবেই বিশ্বাস করেন তাঁরা।

মিজো, কুকি, পইতেদের বড় একটা অংশ নিজেদের ‘বাইবেল’-এ উল্লেখিত হারিয়ে যাওয়া ১০টি উপজাতির একটি বলে দাবি করেন। কথিত আছে, খ্রিস্টপূর্ব ৭২১ সালে আসিরিয়রা ইজরায়েল থেকে এই ১০টি আদি উপজাতিকে নির্বাসিত করেছিল। তাঁরা ‘জুডাইজ্ম’ পালন করতেন। তাদেরই একটি ধারা পূর্ব এশিয়া, ইউনান, মায়ানমার হয়ে মিজোরাম, মণিপুরে প্রবেশ করে।

ইহুদি সংগঠন ‘স্যাভেই ইজরায়েল’ তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা (আলিয়া) করলে ১৯৮৯ সালে এদের প্রথম দলটি ইজরায়েলে পাড়ি দেয়। এর পর দফায় দফায় মণিপুরের সাড়ে তিন হাজার ও মিজোরামের দেড় হাজার বেনে মেনাশে ইজরায়েল পাড়ি দিয়েছেন। এখনও মণিপুরে প্রায় ৫ হাজার মেনাশের বাস। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জেরে এমন দুই ইহুদির প্রাণ গিয়েছে। মিজোরামেও তাঁদের সংখ্যা হাজার খানেক।

বর্তমানে ওফ্রার বাসিন্দা হসুয়ানমাং ২০০০ সালে ইজরায়েল যান। যোগ দেন সেনায়। ২০ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পরে এখন পেশায় ফটোগ্রাফার। কিন্তু পিতৃভূমির উপরে হামলা রুখতে ফের যোগ দিয়েছেন বাহিনীতে। তিনি জানান, ইজরায়েলের নিয়মানুযায়ী পুরুষদের অন্তত ৩২ মাস ও মহিলাদের ২৪ মাস সামরিক বাহিনীতে থাকতে হয়। এই জরুরি পরিস্থিতিতিতে মেনাশেদের অনেককেই দেশের সেবার জন্য তলব করা হয়েছে। মণিপুর বেনে মেনাশে কাউন্সিলের সভাপতি লালাম হাংসিং জানান, বর্তমানে ৮০ জন বেনে মেনাশে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করছেন। ৩০০ জন আছেন রিজার্ভে। বেনে মেনাশেদের সাহায্যকারী সংগঠন দেগেল মেনাশে ইজ়রায়েলের কার্যবাহী অধিকর্তা ইশাক থাংজোম জানান, এখন পর্যন্ত সেখানে বেনে মেনাশেরা নিরাপদে আছেন। কাউকে বন্দিও করা হয়নি। গাজ়া নিরাপদ রয়েছে।

২০০৬ সালে সপরিবারে ইজ়রায়েলে যাওয়া মিজোরাম সরকারের প্রাক্তন কর্তা পিয়াল ত্লাউ এখন দেশের উত্তরে আফুলায় চাকরি করেন। সেখানে যুদ্ধের আঁচ পড়েনি। তিনি জানান, তাঁর তিন ছেলে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। বড় ছেলে মিখেল ১০ বছর সেনাবাহিনীতে কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে অবসর নেয়। সে এসডেরোট শিবির ছাড়ার পরেই হামাসের হানায় তাঁর ১০ সতীর্থ মারা যায়। বাকি ২ ছেলেও এখন জরুরি যুদ্ধ পরিষেবার ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

কী করছেন মিজোরাম-মণিপুরের বেনে মেনাশেরা?

তাঁরা এখন রোজ সন্ধ্যায় ইজরায়েলে থাকা সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করছেন, মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। সিনাগগে চলছে তেহিলিম পাঠ। এলিসাভা জোডিংগি বলছিলেন, “একদিকে মণিপুরে জনজাতিদের নির্মুল করার যুদ্ধ চলছে। অন্য দিকে ইজরায়েলে চলছে সন্ত্রাসবাদী হানা। মাতৃভূমি-পিতৃভূমি দুই ভূখণ্ডেই চাপে বেনে মেনাশেরা।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

War Israel War Hamas Attack Manipur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}