‘চিরনূতনের’ ডাক দিয়ে বৈশাখকে আহ্বান জানালেন শহরের বিশিষ্টেরা। বাঙালির খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, গানে মজল আর্বানার ক্লাব ব্যাঙ্কোয়েট। ২৬ এপ্রিল, সান্ধ্য জমায়েত ‘এসো হে বৈশাখ’-এ উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ, জহর সরকার, ইশা সাহা, মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, সোমচন্দা ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সূচনায় পহেলগাঁওয়ের নিহতদের স্মরণে দু’মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এমন একটি ঘটনার পর মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক যোগাযোগ যে আরও বেশি করে দরকার, আড্ডা-গান-গল্পের যে প্রয়োজনীয়তা কতখানি, শনিবারের রাতের এই অনুষ্ঠান সে কথাই বলে। অধ্যাপক মানবীও সেই কথাই মনে করালেন অনুষ্ঠানের শুরুতে।
তার পর গানবাজনার ফাঁকে ফাঁকেই আড্ডা চলল গানের ইতিহাস নিয়ে। ভারতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্যের মিশেলে ফিউশনের জন্ম, নতুন প্রজন্মের কাছে ঢোল-তবলা-খোলের আওয়াজের অবলুপ্তি, প্রযুক্তিগত শব্দ বা আওয়াজের জনপ্রিয়তা, নানাবিধ বিষয়ে কথা বললেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। পাশাপাশি জহর সরকার বাংলার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বললেন। আলু-লঙ্কা-পেঁয়াজের সঙ্গে বাঙালির আলাপ-পরিচয় এবং সখ্যের ইতিহাস, বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের উপর ইংরেজদের প্রভাব, ইত্যাদি নিয়ে গল্প শুনিয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন তিনি।

বাঙালির খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, গানে মজল আর্বানার ক্লাব ব্যাঙ্কোয়েট। —নিজস্ব চিত্র।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গাওয়ার সময়ে দর্শকদের যুক্ত করান বাবুল সুপ্রিয়। মঞ্চ এবং দর্শকাসনের ব্যবধান ঘুচে যাওয়ার ফলে জমাটি মেজাজ ধরা পড়ে। উপস্থিত ছিলেন নতুন প্রজন্মের নায়িকা ইশাও। আইনজীবী থেকে অভিনেত্রী হওয়ার জীবনকাহিনি উদ্বুদ্ধ করেছে ছোটদের। অনুষ্ঠান শেষ হয় সোমচন্দা ভট্টাচার্য এবং শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক গান দিয়ে।
অনুষ্ঠানটির কিউরেটর এবং সঞ্চালক অরিন্দম শীল আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, ‘‘চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত এই অনুষ্ঠানের পৌরোহিত্য করেন। তাঁর উপস্থিতিতে এবং তারকা থেকে সাধারণের ভিড়ের মধ্যে ভীষণ সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছি আমরা। আমাদের ক্লাবটি সব সময়েই চেষ্টা করে মানুষের পাশে থাকতে। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ হোক অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে আনন্দ দেওয়াই হোক। এই নিয়ে দ্বিতীয় বছরে পা রাখল এই উৎসব। আমাদের ইচ্ছে, প্রতি বছরই বৈশাখের অভ্যর্থনা আমরা এ ভাবেই করব। এতে মানুষের মন ভাল থাকে। সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।’’
অনুষ্ঠান শেষ হলেও আড্ডা চলেছে আরও অনেক ক্ষণ। ফিশ কবিরাজি, ডায়মন্ড ফিশ ফ্রাই, ফিশ কাটলেট, বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকা, তা ছাড়া বাসন্তী পোলাও, মাটন আইসক্রিম, কুলফি, সোডা শিকাঞ্জি, মালপোয়া, পাটিসাপটা দিয়ে জমিয়ে ভূরিভোজ দিয়ে সমাপ্তি।