—ফাইল চিত্র।
জমি আইন সংশোধনের জেদ দেখালেও তার রাজনৈতিক তাপ ইতিমধ্যেই গায়ে লাগতে শুরু করেছে সরকারের। এতটাই যে এখন শিবসেনা বা অকালির মতো শরিক দলগুলিও এ ব্যাপারে কেন্দ্রের নীতির সমালোচনা করে গা বাঁচিয়ে চলেছে। তাও সাহসী মুখ দেখাচ্ছিল শাসক দল। কিন্তু এরই মাঝে আবার ১১টি শ্রমিক সংগঠন দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডেকে দেওয়ায় এ বার সিঁদুরে মেঘ দেখছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘট ডেকেছে ২ সেপ্টেম্বর। সূত্রের খবর, তার আগেই তাদের কিছুটা প্রশমিত করতে দ্রুত ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে দু’দিন আগে শ্রমমন্ত্রী বঙ্গারু লক্ষণকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি সম্মেলনের নেতৃত্ব দেবেন। জুলাইয়ের শেষে বা অগস্টের গোড়ার দিকে যেন ওই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শ্রমিকদের দশ দফা দাবি খতিয়ে দেখার জন্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী গঠন করে দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ওই গোষ্ঠীর প্রধান। মোদী তাঁকেও পরামর্শ দিয়েছেন যাতে ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ডাকার আগে তিনিও শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনায় বসেন। জেটলি-র সঙ্গে ওই গোষ্ঠীতে রয়েছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। ঘটনা হল, ধর্মঘটের একটি পৃথক হুমকি নিয়ে পীযূষ গয়ালও এখন চিন্তায় রয়েছেন। বাদল অধিবেশনে তিনি ইলেকট্রিসিটি সংশোধন বিল পেশ করতে চলেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠনগুলি হুমকি দিয়েছে, সংসদে ওই বিল পেশ হলেই তাঁরা বিনা বাক্যব্যয়ে ধর্মঘটের পথে হাঁটবেন।
তবে কেন্দ্রের এই তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিআই নেতা তথা শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কবে শ্রম সম্মেলন ডাকা হবে তা নিয়ে সরকারের তরফে এখনও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে সরকার যদি ভেবে থাকে স্রেফ সম্মেলন ডাকলে চিঁড়ে ভিজবে তা কখনওই হবে না। কারণ, শ্রম সম্মেলন হয় ত্রিপাক্ষিক। সেখানে শ্রমিক, সরকার ও মালিক— তিন পক্ষই থাকে। সবাই সবার মত রাখে সেখানে। কিন্তু শ্রম সম্মেলনের সুপারিশগুলি মানা সরকারের উপর বাধ্যতামূলক নয়। অতীতে এমন সব সুপারিশ রয়েছে যা সরকার এখনও মানেনি।’’ তাঁর কথায়, শ্রমিকদের দাবিগুলি পরিষ্কার। সরকারকে তা নিয়ে স্পষ্ট জবাব দিতে হবে। তা হল, এক) শ্রম আইন সংস্কারের নামে শ্রমিকদের শোষণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। দুই) শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করতে হবে। জমি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লাভে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নীকরণ চলবে না। সরকার এই দাবিগুলি মানবে কি? সেটাই আসল কথা।
যে ১১টি শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তার মধ্যে বিজেপি-র ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘও রয়েছে, যারা মোদী সরকারের জমি নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার পথে হাঁটছে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ওটা কৌশলগত। দেশজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন যে পথে চলছে তার বাইরে বিএমএস যেতে পারে না। কিন্তু এ-ও হতে পারে, আরএসএসের অনুমোদিত এই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পরামর্শেই প্রস্তাবিত ধর্মঘটের আগে শ্রম সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশ্ন হল, শ্রমিক সংগঠনগুলিকে প্রশমিত করার জন্য সরকার কী কৌশল নিচ্ছে বা শ্রম সম্মেলন ডেকে কী ধরনের প্রস্তাব রাখতে চলেছে? শ্রম মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, শ্রম আইন সংস্কার করা সময়ের দাবি। জমি আইন সংশোধন অধ্যাদেশও খারিজ করার প্রশ্ন উঠছে না। তবে শ্রম সম্মেলন ডেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার দাওয়াই দিতে পারে মোদী সরকার। এক তো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একটি ইউনিক নম্বর কার্ড দেওয়া হবে। ওই ইউনিক নম্বর দেওয়ার পর তাঁদের স্বাস্থ্যবিমার জন্য পৃথক নতুন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে অর্থমন্ত্রক। তা ছাড়া, অটল পেনশন যোজনাকেও ওই প্রকল্পের সঙ্গে জোড়া হবে।
মজার ব্যাপার হল, বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এমনকী, তাঁর এ-ও দাবি, শ্রম আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁদের মতামতগুলিও ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করে দেখছেন। যদিও গুরুদাসবাবুরা এখনও অনমনীয়। তাঁদের স্পষ্ট কথা, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে সরকার ছেলে ভোলানোর খেলায় নেমেছে। কিন্তু গোল গোল আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের আর শান্ত করা যাবে না, এটা সরকারের জেনে রাখা ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy